গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থান তীর্থভূমি গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগরের খ্যাতি কেন? তীর্থভূমি বলে, না কি মেলাভূমি বলে। কিন্তু গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিটি কম আকর্ষণীয় নয়।
ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে এই সঙ্গমে।
মেলার সময়টুকু বাদ দিলে গঙ্গাসাগর নিরালা, নির্জন। মন্দিরের সামনে থেকে নির্জন বালিয়াড়িটি সোজা গিয়ে মিশেছে সমুদ্রে। এখানে সমুদ্র ঢেউ ভাঙে না। তির তির করে এগিয়ে এসে পা ভিজিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাও সমুদ্রের ভিতরে। পায়ের পাতা ভেজানো জল থেকে হাঁটু জলে। বড় কেউ সঙ্গে থাকলে স্নান করো। ফিরে এসো সমুদ্রতটে। অবাধে খেলে বেড়ায় লাল কাঁকড়া। তোমার আগমন টের পেলে সেঁধিয়ে যায় গর্তে। দূরে, দিগন্তরেখায়, একটা, দু’টো, তিনটে….অনেক অনেক নৌকা, নাকি ট্রলার। মাছ ধরতে গেছে গভীর সমুদ্রে।
ভ্যানরিকশায় চেপে বেরিয়ে পড়ো দ্বীপ দর্শনে। মঠ–মন্দির-আশ্রমের এই সাগরসঙ্গমে। ঘুরে এসো মনসাদ্বীপে রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রমে আর লাইটহাউসে। বিকেলে আর একবার চলে যাও সাগর কিনারায়। তবে ভিন্ন পথে। যে পথ সেচবাংলো থেকে সমুদ্রে গেছে সেই পথে। এই পথে ঝাউয়ের জঙ্গল পাবে। এখনও অক্ষত।
সন্ধ্যায় ঘরে বসে বড়োদের কাছে শুনে নাও ভগীরথের গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার কাহিনি।
নিকটতম বড় শহর কলকাতা। রেলস্টেশন কাকদ্বীপ ও নামখানা। কলকাতা থেকে বাসে ঘণ্টা তিনেকের যাত্রায় পৌঁছনো যায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে। ট্রেনে কাকদ্বীপ বা নামখানা পৌঁছেও বাসে বা রিকশায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে ফেরি ভেসেলে গঙ্গা পেরিয়ে কচুবেড়িয়া। কচুবেড়িয়া থেকে বাসে বা ট্রেকারে ৩০ কিমি দূরে সাগর। মেলার সময় যাতায়াতের আরও বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। গঙ্গাসাগরে থাকার জন্য নানান ধরমশালা ও পান্থনিবাস আছে। এ ছাড়া পি ডব্লু ডি, সেচ দফতরের ও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাংলো ও পঞ্চায়েতের যাত্রীনিবাস আছে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020