পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও পূর্ব ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী কলকাতা হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। কলকাতা ও তার শহরতলি অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ থাকেন। জনসংখ্যার দিক দিয়ে কলকাতা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন শহর এবং পৃথিবীর ত্রয়োদশ বৃহত্তম শহরাঞ্চল।
ব্রিটিশ রাজত্বের দীর্ঘ সময় কলকাতা ভারতের রাজধানী ছিল। শহরের নথিবদ্ধ ইতিহাস শুরু হয় ১৬৯০ সাল থেকে, যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই শহরে এসে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ শুরু করে। কোম্পানির এক আধিকারিক জব চার্নককে শহরের প্রতিষ্ঠাতা বলে গণ্য করা হয়। যদিও ২০০৩ সালে আদালতের একটি রায়ে বলা হয়েছে, কোনও একজন ব্যক্তিকে কোনও শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সরকারি ভাবে মান্যতা দেওয়া যাবে না।
কলকাতার কিছু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
ময়দানে দক্ষিণ-পূর্বে চৌরঙ্গি ও লোয়ার সার্কুলার রোডের সংযোগস্থলে বাংলার তথা কলকাতার অন্যতম সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র রবীন্দ্রসদন ও নন্দন। লাগোয়া শিশির মঞ্চ, বাংলা আকাদেমি সভাঘর, গগনেন্দ্র প্রদর্শশালা ও কলকাতা তথ্য কেন্দ্র।
নন্দন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। চলচ্চিত্র শিল্প ও সচেতনতার উন্নতি সাধন এর লক্ষ্য। এখানে দু’টি সিনেমা হল আছে, নন্দন ১ ও নন্দন ২। এ ছাড়াও চলচ্চিত্রবিষয়ক অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য আরও দু’টি হল আছে- নন্দন ৩ ও নন্দন ৪। সিনেমা দেখা ছাড়াও নন্দর চত্বর নানা বয়সের কলকাতাবাসীর নিয়মিত আড্ডার জায়গা হিসেবেও পরিচিত। এই চত্বরে সারা বছরই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা রকম সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ চলতে থাকে।
ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের উজ্জ্বল ঐতিহ্যকে স্মরণে রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র চর্চার কেন্দ্র হিসেবে নন্দন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি উদ্বোধন করেছিলেন সত্যজিত রায়। বাড়ির লোগোটির নকশাও তিনিই করেছিলেন। নন্দনের ঝুলন্ত স্থাপত্য সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্রমোদীর প্রশংসা অর্জন করেছে। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতার সমৃদ্ধ শিল্প ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের প্রতীক নন্দন প্রেক্ষাগৃহ ও তার সংলগ্ন এলাকা।
নন্দন চত্বরের মধ্যেই রয়েছে নাটক ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্র সদন। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ও অন্যান্য বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানেও চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হয়। ১৯৬১ সালের ৫ আগস্ট ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রবীন্দ্র সদনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৭ সালের অক্টোবরে।
কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস ভারতের প্রাচীনতম কারু শিল্প সংগঠন। ১৯৩৩ সালে লেডি রানু মুখার্জি এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এই সোসাইটির দফতর ছিল ভারতীয় জাদুঘরে। জাদুঘরের বারান্দায় এর বাৎসরিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হত। ১৯৫০ সালে লেডি রানু মুখার্জি, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় এবং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চেষ্টায় সোসাইটি ক্যাথিড্রাল রোডে স্থানান্তরিত হয়। এটি কলকাতার নন্দন চত্বরের লাগোয়া ।
এখানে একটি নাটকের প্রেক্ষাগৃহও আছে। এই প্রেক্ষাগৃহ, কলকাতার নাট্যচর্চাকারী ও নাট্যমোদীদের নিয়মিত গন্তব্য। ১৯৮৪ সাল থেকে এখানে বাৎসরিক নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
৬বি দ্বারকানাথ টেগোর লেনের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে ঠাকুর পরিবারের বাসস্থান ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালির সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এই বাড়ির বাসিন্দারা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিলেন. তার মধ্যে সবার আগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে এই বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৬২ সালের ৮ মে , রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত মহর্ষি ভবনে রবীন্দ্রনাথ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাড়িটি এবং ‘বিচিত্রা’ বর্তমানে একটি মিউজিয়াম । নাম, রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম। এখানে ঠাকুরদের ব্যবহৃত ও স্মৃতিধন্য বহু সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে।
এশিয়ার বৃহত্তম মিউজিয়াম ভারতীয় জাদুঘর। চৌরঙ্গি ও পার্ক স্ট্রিটের কাছে জওহরলাল নেহরু রোডে এশিয়া ও ভারতের প্রাচীনতম যাদুঘরটির অবস্থান। মিশরের প্রাচীন মমি থেকে বিরাট উল্কাপিন্ড, তিমির চোয়াল, বৃহদাকার কুমির, কচ্ছপ-কাঁকড়ার ফসিল, বুদ্ধের অস্থির আধার, প্রাচীন মুদ্রা, নানান দুর্লভ ভাস্কর্য ও ছবির সংগ্রহ রয়েছে এখানে। সোমবার ছাড়া প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। জাদুঘরের কাছেই ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। জাদুঘরের লাগোয়া কলকাতা আর্ট কলেজ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লানেটারিয়ামটিই জওহরলাল নেহরু রোড ও শেক্সপিয়ার সরণির সংযোগস্থলে অবস্থিত কলকাতার বিড়লা প্লানেটারিয়াম। নির্মাণের দিক থেকে এটিই ভারতের প্রথম প্লানেটারিয়াম। তৈরি হয়েছিল ১৯৬২ সালে। প্রতি দিন বিভিন্ন সময়ে ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দি ধারাভাষ্যে দর্শকদের চোখের সামনে প্রদর্শনীকক্ষে সৌরজগতের চেনা-অচেনা নানান দিক তুলে ধরা হয়।
ময়দানের দক্ষিণে ও প্লানেটারিয়ামের উল্টো দিকে শ্বেত পাথরে তৈরি ২০০ ফুট উঁচু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। চূড়ায় ব্রোঞ্জের পরী। মেমোরিয়ালের অন্দরে ছবি ও মূর্তিতে ব্রিটিশ ভারতের তথা বাংলার নানান স্মারক – টিপুর তরবারি থেকে সিরাজের কামান, ব্রিটিশ শাসনকর্তাদের জলরঙে আঁকা ছবি রয়েছে। রাতে আলো ও ধ্বনির প্রদর্শনীতে দেখে নেওয়া যায় কলকাতার ৩০০ বছরের অধ্যায়।
ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার (১৮১৯-১৯০১) স্মৃতিতে এটি তৈরি হয়েছিল। ১৯০৬ সাল থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯২১ সালে। এর স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম এমারসন। এটি ১০৩ মিটার দীর্ঘ, চওড়ায় ৬৯ মিটার। উচ্চতা ৫৬ মিটার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানের নকশা তৈরি করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও ডেভিড প্রেইন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পশ্চিমে রেসকোর্স।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
ভারতীয় ডাক বিভাগের ৩৭তম সর্বভারতীয় পোস্টাল টেবিল...
কেন এর পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয় ???
যাঁদের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে তাঁদের পদ, ঠিকানা, ...