অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলা

অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলা

অধিকাংশ মেলাই কোনও না কোনও পূজাপার্বণকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়, অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলা সে তালিকায় এক বিরল সংযোজন। এ মেলার আয়েজন শ্রীচৈতন্যের অন্যতম পার্ষদ গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধদিবস উপলক্ষ্যে। আরও উল্লেখ্য, মানুষের কল্পনাশ্রিত বিশ্বাসে দেবতা এখানে তার মানুষ পিতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করে। তাই এই মেলা গোবিন্দ ঘোষ ঠকুরের শ্রাদ্ধ-মেলা নামেও পরিচিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণবমার্গের এক ট্রাজিক নায়ক সাধক গোবিন্দ ঘোষ। এক সময় শ্রীচৈতন্যের এই বিশ্বস্ত সহচর পরবর্তীকালে বৈষয়িক আসক্তির জন্য শ্রীচৈতন্যদেব দ্বারা পরিত্যাজ্য হয়ে অগ্রদ্বীপের গঙ্গার ধারে বসবাস করতে থাকেন। সন্ন্যাসধর্ম পরিত্যাগ করে সংসারধর্ম পালন করলেও গোপীনাথ বিগ্রহকে নিয়েই সাধনভজন করতে থাকেন গোবিন্দ ঘোষ। তবে তাঁর গার্হস্থ্যজীবনও সুখের হয়নি। অল্প দিনের মধ্যেই হারান স্ত্রী ও পুত্রকে। তাঁকে নিয়ে প্রচলিত লোকগাথা থেকে জানা যায় যে বৃদ্ধ বয়সে তিনি তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়া নিয়ে এমনই মুষড়ে পড়েন যে ভগবান স্বয়ং তাঁর ভক্তের শ্রাদ্ধাদি সম্পন্ন করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। এই লোকগাথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ মেলার জন্ম রহস্য। সেই হিসেবে এই মেলা প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো।

 

হাওড়া-কাটোয়া লাইনে কাটোয়ার তিনটি স্টেশন আগে অগ্রদ্বীপ। গঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা অগ্রবর্তী গ্রাম হিসেবে এই নামকরণ। গ্রামটি স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে গঙ্গার অপর পারে। বর্ধমান জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও জায়গাটি নদিয়া ঘেঁষা। গঙ্গা এখানে অপ্রশস্ত খালের মতো।

দোল পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণা একাদশীতে ঘোষ ঠাকুরের প্রয়াণতিথি অনুসারে ‘চিঁড়ে মহোৎসব’-এর মধ্য দিয়ে মেলার শুরু। ওই দিন মন্দির থেকে গোপীনাথ বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় গোবিন্দ ঘোষের সমাধি মন্দিরে, দেবতার হাত দিয়ে মানব পিতার কুশ ও পিণ্ডদানের উদ্দেশে। দেবতাকে কাছা পরিয়ে তাঁর মানবপিতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের এমন বিরল নমুনা চাক্ষুষ করতে হলে আসতে হবে গ্রামবাংলার এই মেলা প্রাঙ্গণে। প্রচলিত নিয়ম মেনে আগত পুণ্যার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাংলার মানুষও এ দিন অরন্ধন পালন করেন। দ্বিতীয় দিনে অন্ন মহোৎসব, তৃতীয় দিন গঙ্গা স্নান, চতুর্থ দিন স্থানীয় ভাবে পালিত গোপীনাথের দোলের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ।

মেলাটি নিতান্তই গ্রামীণ মেলা যাত্রীরাও কাছে-দূরের গ্রামীণ মানুষ, আসেন তীর্থ করতে। অধিকাংশই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষ। বাণিজ্যিক দিকটাও তেমনই। বেশ কিছু দোকান বসলেও বেশির ভাগই হরেক মাল ১০ টাকা গোছের। ব্যতিক্রম শুধু কাটোয়ার বিখ্যাত কাঠের পুতুল। গ্রাম বাংলায় এখনও এই পুতুলের ভালোই চাহিদা। শিল্পীদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারও উপস্থিত থাকে এই মেলায়।

সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়। কারও কারও মতে সংখ্যাটা ৫-৬ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। যত দিন যাচ্ছে ততই নতুন করে জনজোয়ারে ভাসছে অগ্রদ্বীপের মেলা। তবে গঙ্গার ভাঙনের করাল ভ্রূকুটি এই মুহূর্তে মেলার ভবিষ্যতে প্রশ্নচিহ্ন রেখে দিয়েছে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate