জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মনসা পুজোর আয়োজন করা হয়। শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে হয় ভাসান উৎসব। বসে মেলা। মনসা পুজো উপলক্ষে সাপুড়েরাও ভিড় জমায় সে সময়। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর, বর্ধমানের জাহাননগর, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে বীরভূমে এই লোক সংস্কৃতির ধারা বহু প্রাচীন এবং সেখানেই মনসা পূজার প্রচলন সবচেয়ে বেশি।
শিয়ালদা-রানাঘাট লাইনের চাকদহ স্টেশন থেকে কলকাতা-শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ককে আড়াআড়ি ভাবে অতিক্রম করে ১০-১২ কিলোমিটার গেলে চাকদা-বনগাঁ রাস্তায় বেলে-বিষ্ণুপুর। বেলে-বিষ্ণুপুর, খেদাইতলা এবং পদ্মাবিলা --– ত্রিভুজাকৃতি জমির তিন বিন্দুতে তিনটি গ্রামের অবস্থান জুড়ে মেলার বিস্তার। বিষ্ণুপুরের সঙ্গে ‘বেলে’ কিংবা পদ্মবিলার ‘বিলা’ যোগ হয়েছে সম্ভবত বিল বা জলাশয়ের কারণে। এক সময় বড় বিল ছিলে এ তল্লাটে। বর্ষায় ডুবে যেত আশেপাশের জমি। একে বলা হত শালকির মাঠ। মাঠের একধারে বড় নিমগাছের নীচে ছিল মনসার থান। খেদাই ঠাকুর ছিলেন তার প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয় মানুষদের মতে প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই মেলা।
সব কিছু থাকা সত্ত্বেও খেদাইতলার মেলার বিশেষত্ব সাপ আর সাপুড়েতে। তাই এর নাম খেদাইতলার সাপের মেলা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বেদে-বেদিনীরা আসেন নানা রকমের সাপ নিয়ে। মন্দির বলতে চালবিহীন এক ইটের কাঠামো। তারই মধ্যে প্রাচীন এক নিম গাছের গুঁড়িতে চাল-কলা দিয়ে পুজো দিচ্ছেন হাজারো মানুষ।
সারা বছরই শনি-মঙ্গলবার পুজো হয়, তবে শ্রাবণ মাসে প্রতি দিন আর শ্রাবণ সংক্রান্তিতে বিশেষ পুজো আর সেই পুজোকে কেন্দ্র করেই বসে মেলা। এ দিন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ সব ধর্মের স্থানীয়মানুষ অরন্ধন পালন করে। সেই অর্থে একে সম্প্রীতির উৎসবও বলা হয়। এই মেলা সব অর্থেই এক গ্রাম্য মেলা। এক দিনের মেলা হলেও মেলা চলে প্রায় ৩-৪ দিন ধরে।
তবে একটা কথা বলা দরকার, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের জেরে হাত পড়েছে সাপুড়েদের পেশায়। তাই ক্রমেই কমে আসছে মেলায়আসা সাপুড়েদের সংখ্যা।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/23/2020