বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনটি উৎসবমুখর বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন পোশাক, হালখাতা প্রভৃতির পাশাপাশি এ সময় মেলাও বসে বসে রাজ্যের নানা প্রান্তে। গোবরডাঙার গোষ্ঠবিহার মেলা তেমনই এক মেলা।
গোবরডাঙা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক প্রাচীন শহর। এখানকার জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ১৮২২ সালে প্রসন্নময়ী কালীমন্দির ও দ্বাদশ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মেলার সূত্রপাত বলে মত থাকলেও ইতিহাস বলে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকেই এই মেলার যাত্রা শুরু। তবে একটা কথা ঠিক, বছরের প্রথম দিনে খাজনা মেটাতে আসা প্রজারা জমিদার বাড়িতে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসত বিক্রিবাটার জন্য, তার থেকেই মেলার শুরু। জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও নববর্ষের দিনটিতে ধনে, জিরে, লঙ্কা, হলুদ প্রভৃতি মশলার বিপুল কেনাবেচা এই মেলায় লক্ষ করা যায়।
১৯৮৩ সাল থেকে গোবরডাঙা ঐতিহাসিক স্মৃতিরক্ষা কমিটির ব্যবস্থাপনায় এই মেলা পরিচালিত হয়ে চলেছে নব কলেবরে। বর্তমানে মেলায় নাটক, কবিতা, গান প্রভৃতি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রভাতফেরি, রক্তদান শিবির, স্মরণিকা প্রকাশ, বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ ও সম্মাননার মতো যুগোপযোগী কর্মকাণ্ড। মেলার জমিও নথিভুক্ত হয়েছে সরকারি ভাবে। মসলন্দপুর, চারঘাট, গাইঘাটা, হাবড়া তেকে ব্যাপারীরা তাঁদের পণ্য নিয়ে আসেন রেলে, সড়কপথে। মাটির হাঁড়ি কলসি, খেলনা, বাঁশ-বেতের ধামাকুলো, টোকা, কাঠ ও লোহার রকমারি আসবাবের পাশাপাশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাতপাখার বিপুল সম্ভার। তবে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব বাড়ার কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে মেলার ভৌগোলিক পরিসর।
কলকাতা থেকে মাত্র ৫০-৫৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানার অন্তর্গত গোবরডাঙা। কলকাতা থেকে বনগাঁ লোকালে ঘণ্টাদুয়েকের পথ।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020