দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ছোট্ট শহর গঙ্গারামপুর । রায়গঞ্জ আর মালদা থেকে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার আর বালুরঘাট থেকে ৪০। প্রধান রাস্তার দু-পাশে বেড়ে উঠেছে এই শহর। বাসস্ট্যান্ডকে পেছনে রেখে দক্ষিণ বরাবর একটু এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ধলদিঘির পাড়ে, যার অন্য পাশে চাষের ক্ষেত। সে দিকেই একলাখি-বালুরঘাট রেলপথ।
ধলদিঘির দুই পাড়ে দুই মুসলিম সন্তের সমাধি। এক দিকে আতাহউল্লার অন্য দিকে ফকির করম আলির। আতাহউল্লার দরগাটি প্রাচীন। পুরো চত্বরটা সংরক্ষিত হলেও বছরের একটা দিন মুসলিম বর্ষপঞ্জির জোলহোস মাসের ১২ তারিখ মানুষের ঢল নামে ছোট্ট জায়গাটিতে, সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে।
দিঘির অপর পাড়ে ফকির করম আলির মাজার। তুলনায় নবীন, কড়িবরগার ছাদযুক্ত। দেখভালের দায়িত্বে আছেন ফকিরের বংশধরেরা। তবু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা জীর্ণ। এখানেও পুণ্যকামী মানুষের সমারোহ। কুশমান্ডি, ইটাহার, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ থেকে মানুষ আসে বাসে, লরিতে। আশেপাশের মানুষ আসে হেঁটে, সাইকেলে, ভ্যানরিকশায়।
সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় পোলাও, বিরিয়ানি রান্নার আয়োজন। তার পর পিরের উদ্দেশে সিন্নি চড়িয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। শেষ শীতের দুপুরে সে এক সুন্দর বনভোজন। এ দিন কাছের দূরের হিন্দুরাও আসেন, নাম সংকীর্তন করেন, হরির লুট দেন মাজার প্রাঙ্গণে। তাঁদের বিশ্রামের জন্য হরিধামের ব্যবস্থা আছে ফকিরের জমিতে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এ ভাবেই এখানে বাঁধা পড়েছেন সম্প্রীতির বন্ধনে সুদূর অতীত থেকে।
আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছর আগে বানরাজাদের সময়ে কালদিঘি ও ধলদিঘি নামে জোড়া দিঘি খনন করা হয়। দরবেশ আতাউল্লাহ সমসাময়িক এবং জনহিতকর কাজে ব্রতী ছিলেন। মতান্তরে তিনিই ধলদিঘি খনন করান। পরবর্তী কালে ফকির করম আলি আতাহউল্লার শিষ্য রূপে তাঁর ভাবাদর্শ প্রচার করেন। এই ফকিরের উরস উপলক্ষেই তাঁর বংশধরেরা এই উৎসব পরিচালনা করে আসছেন ১২০৮ বঙ্গাব্দ থেকে। এই মেলা তাই ফকিরের মেলা নামেও পরিচিত।
তবে এই মেলায় বেশ কিছু মানুষের আগমন হলেও মেলার সেই গৌরব আর নেই। দিনে দিনেই শেষ হয়ে য়ায় মেলা। আসেন নিম্নবিত্ত কিছু মানুষ। থাকে না তেমন আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থাও। অল্প কিছু দোকানি থাকেন প্লাস্টিক বিছিয়ে। অথচ পঞ্চাশ বছর আগেও এই মেলা চলত এক মাস ধরে। এটি ছিল রাজ্যের সবচেয়ে বড় পশু মেলা। ভারতের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হত এই মেলায়।
স্থানীয় মানুষের মতে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার আর ছোট গঞ্জ থেকে গঙ্গারামপুরের বড় বাজার হয়ে ওঠাতেই হারিয়েছে এই মেলার কৌলিন্য।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/26/2020