দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার অন্তর্গত সাগরদ্বীপ দ্বীপ হলেও যথেষ্ট বড়। উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে সব চেয়ে চওড়া অংশ ১১ কিলোমিটার। সমুদ্র তথা সাগর বেষ্টিত দ্বীপ, তাই নাম হয়েছে সাগরদ্বীপ। কেউ কেউ বলেন সাগর রাজার নাম থেকেই এই নাম। সাগরদ্বীপ আজ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে তার সর্বভারতীয় পরিচিতি সাগর মেলার জন্য।
সাগর মেলা মানুষের মেলা। পুণ্যকামী, গ্রাম ভারতের সহজ সরল মানুষের মেলা। এখানে দেখা যায় নানা পোশাকের মানুষের বিচিত্র সমাবেশ। বৈচিত্র্য তাদের খাওয়া দাওয়া, আদবকায়দা, ভাষাতেও। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি তিথিতে মকর স্নান উপলক্ষে বসে এই মেলা। তার সঙ্গে চলে গঙ্গাপূজা, পিতৃতর্পণ, বৈতরণী পার প্রভৃতি ক্রিয়াকলাপ। মূলত স্নান চলে তিন দিন। সংক্রান্তির আগের দিন বাউনির স্নান, সংক্রান্তির দিন মকর স্নান এবং পয়লা মাঘ মাঘী স্নান। শেষ কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিয়ে বাড়ি ফেরা।
মেলার সময় মন্দিরের ধার ঘেঁষে তৈরি হয় সার বাঁধা ছোট ছোট অস্থায়ী কুটির, নাঙ্গা সাধুদের ডেরা। বাংলার একমাত্র এই মেলাতেই নাগা সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তেমনই জড়ো হয় সাধুসন্ত ভিখারিরা। পুণ্য সঞ্চয়ই এই মেলার প্রধান লক্ষ্য। তাই বিনোদনের দিকটা বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। অন্যান্য মেলার মতো দেখা যায় না নাগরদোলা, সার্কাস বা ম্যাজিকের আসর। তবে তীর্থযাত্রীদের চাহিদা মেটাতে খাবারের দোকান বসে প্রচুর। আর দেখা যায় লাঠি বা ছড়ির দোকান। বর্তমানে এ মেলা পরিচালনা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। খরচ তুলতে চালু আছে তীর্থকর। মেলার জন্য মাসখানেক আগে থেকেই প্রায় অস্থায়ী শহর গড়ে তোলা হয়। এ ছাড়াও ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বজরং পরিষদ, রামকৃষ্ণ মিশন, রেড ক্রস, হ্যাম রেডিও, বয়েজ স্কাউটের মতো অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়োজিত থাকে মেলা যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে দেওয়া, মেলাস্থল পরিষ্কার করা এমনকী শবদাহের ব্যবস্থাপনার কাজে। এ ছাড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা তো আছেই। জনসংখ্যার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের সব চেয়ে বড় মেলা এই সাগর মেলা। প্রতি বছর এখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ আসেন তীর্থ করতে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020