ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (জন্ম: ১৮১২ - মৃত্যু: ১৮৫৯) ঊনবিংশ শতাব্দীর এক জন বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন 'সংবাদ প্রভাকর' (বা 'সম্বাদ প্রভাকর')-এর সম্পাদক। তাঁর হাত ধরেই মধ্যযুগের গণ্ডি পেড়িয়ে বাংলা কবিতা আধুনিকতার পথে নাগরিক রূপ পেয়েছিল। তিনি "গুপ্ত কবি" নামে সমধিক পরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো তাঁর পরবর্তী সাহিত্যিকরা ঈশ্বর গুপ্তকে 'গুরু'পদে বরণ করেছিলেন। তাঁর ছদ্মনাম 'ভ্রমণকারী বন্ধু'। এ ছাড়া বহুবিধ পত্র-পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছেন।
তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লি (বা কাঞ্চনপাড়া) গ্রামে। তাঁর প্রপিতামহ নিধিরাম ছিলেন এক জন সুবিখ্যাত কবিরাজ এবং তাঁর পিতা হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ছিলেন। মায়ের নাম শ্রীমতি দেবী। তাঁর বয়স যখন দশ তখন তাঁর মা পরলোকগমন করেন। পিতা ২য় বিয়ে করলে এর পর থেকে তিনি কলকাতার জোড়াসাঁকোতে মামার বাড়িতে বাস করতে শুরু করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় গৌরহরি মল্লিকের কন্যা দুর্গামণি দেবী রেবার সঙ্গে।
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার সম্পাদনায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তিনি সংবাদ রত্নাবলী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ প্রভাকর ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা, তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তর করেন ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পাষণ্ড পত্রিকার সঙ্গে সম্পাদক হিসাবে সংযুক্ত। পরবর্তী বৎসর তিনি সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার দায়িত্বভার পালন করেন। তিনি গ্রাম গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন এবং কবিগান বাঁধতেন। প্রায় বারো বৎসর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিদের তথ্য সংগ্রহ করে জীবনী রচনা করেছেন।
তাঁর কবি প্রতিভা কিছুটা সাংবাদিক ধরনের হলেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর চিরস্থায়ী আসনলাভ সম্ভব হয়েছে কারণ এক দিকে মধ্যযুগের দেবমাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় থেকে বাংলা কবিতাকে মুক্ত করে তিনি যেমন অনায়াসে 'পাঁঠা', 'আনারস', 'তোপসে মাছ' ইত্যাদি বিষয় অবলম্বনে কবিতা লেখেন; তাঁর কবিতায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনৈতিক,সামাজিক ঘটনাবলির চিত্ররূপ তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে। তৎকালীন কবিওয়ালাদের জিম্মা থেকে বাংলা কবিতাকে তিনি নাগরিক বৈদগ্ধ ও মার্জিত রুচির আলোয় নিয়ে আসেন। সাংবাদিক রূপেও ঊনবিংশ শতকের এই আধুনিক মানুষটি যথাযোগ্য কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/8/2020