কালীপ্রসন্ন সিংহ (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৪১(?) – ২৪ জুলাই ১৮৭০) বাংলা সাহিত্যে তার দুই অমর অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। সেগুলি হল বৃহত্তম মহাকাব্য মহাভারতের বাংলায় অনুবাদ এবং তাঁর বই হুতোম প্যাঁচার নক্শা। তিনি এক জন লোকহিতৈষী ব্যক্তি হিসাবেও স্মরণীয় ব্যক্তিত্য যিনি চরম দুর্দশাগ্রস্ত বহু মানুষ এবং বাংলা-সাহিত্য আন্দোলনে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। কালীপ্রসন্ন সিংহ ঊনবিংশ শতকের এক জন সাহিত্যকার এবং সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মাত্র উনত্রিশ বছরের জীবনে তিনি সাহিত্য ও সমাজের উন্নয়নের জন্য বহু কাজ করে গিয়েছেন।
খুব অল্প বয়স থেকে তিনি অদ্ভুত স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন, মাত্র এক বার দেখলে কিংবা শুনলেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাংলাভাষা চর্চার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা এই অদ্ভুত ক্ষমতার একটি সাক্ষ্য বহন করে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই তরুণের অনেক বৃদ্ধ সহযোগীদের সঙ্গে একাত্মতা এবং এই ধরনের বিনোদনমূলক থিয়েটারের সংগঠন হিসাবে তাঁদের এই কাজে ব্রতী করতে পারা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। হুতোম প্যাঁচার নক্শা হল তাঁর সেই অমর সৃষ্টি যেখানে উনবিংশ শতকের কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের একটি পরিষ্কার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
কালীপ্রসন্ন সিংহের সব থেকে বড় কীর্তি হল মহাভারতের অনুবাদ। তাঁর সম্পাদনায়, আঠারো পর্ব মহাভারত গদ্য আকারে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, যা এখনও ব্যাপকভাবে পঠিত এবং প্রকাশিত হয়। পুরো প্রকল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তদারকিতে হয়েছিল। এই অনুবাদটি ১৮৫৮ থেকে ১৮৬৬ এর ভিতরে প্রকাশিত হয়েছিল। সমগ্র অনুবাদকরণ প্রক্রিয়াটি উত্তর কলকাতার বরাহনগরে অবস্থিত সারস্বতাশ্রম নামে একটি বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছিল। কালীপ্রসন্ন বিনামূল্যে মহাভারত বিতরণ করেছিলেন। এই বিপুল খরচ বহন করতে তিনি তাঁর বিভিন্ন মহল অর্থাৎ নিজস্ব মালিকানাধীন জমি বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর রচিত মহাভারত অনুবাদটি মহারানি ভিক্টোরিয়া-কে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অনুবাদও করেছিলেন, যা তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর অনুবাদ নাটক রচনার প্রেরণা বা তাগিদ এসেছিল রঙ্গমঞ্চ থেকে। সমাজের বৈষয়িক অবস্থার সঙ্গে রঙ্গমঞ্চের বিলুপ্তি বা পুনরাবির্ভাবের ইতিহাসটি মিলিয়ে দেখলেই তা বোঝা যায়।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/20/2020