বাণী বসু (জন্ম ২৬ ফাল্গুন ১৩৪৬ বঙ্গাব্দ, ১১ মার্চ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) এক জন সুপরিচিত লেখিকা। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ লেখেন, অনুবাদও করেন। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিতা বাণী বসু আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার অধিকরিণী। বাণী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে এম এ (১৯৬২)। বাণী ছাত্রী জীবন থেকেই নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। তাঁর প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৮১তে। প্রথম উপন্যাস জন্মভূমি মাতৃভূমি প্রকাশিত হয় শারদীয়া আনন্দলোকে ১৯৮৭তে। কিন্তু তার আগেই তাঁর অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে। তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদগুলি হল : শ্রী অরবিন্দের সনেটগুচ্ছ, সমারসেট মমের সেরা প্রেমের গল্প, এইচ ডি লরেন্সের সেরা গল্প।
বাণী বসু তাঁর আত্মকথায় লিখেছেন, “... অনেকেই প্রশ্ন করেন আমি নারীবাদী কিনা বা এই নারীবাদ দ্বারা কতটা প্রভাবিত। বলে রাখি, আমি কিন্তু কোনো ইজম-এ বিশ্বাসী নই। আমি নিজে একজন নারী, তাই সমাজে তাদের অবস্থান, দুঃখ-যন্ত্রণাটা চোখে পড়ে বেশি। পুরুষরাও মেয়েদের কথাই লেখে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্থান দেয় না। সামাজিক পরিসরেও নিষ্পেষিত তারা। ৪৯৮-এ ধারা থাকলেও তার সুযোগ নেয় একদল মতলবী মহিলা। যাদের সত্যিই প্রয়োজন, তারা লজ্জা কাটিয়ে উঠে আসতে পারে না আদৌ। একটা কথা বিশ্বাস করি, ইজম বা বাদ-এ বদ্ধ হলে স্বাধীনতা নষ্ট হয়। লেখকের সৃষ্টি ক্ষমতা কিন্তু আর থাকে না।
বিশ্বায়নের এই যুগ কিন্তু বাজার-সর্বস্ব। বড় পাবলিশিং হাউসগুলো মনে করে, পাঠক যেমন চায়, লেখককেও তেমনই লিখতে হয়। বাজারের চাহিদা গ্রাস করেছে লেখককেও। গলা টিপে ধরা হয়েছে সাহিত্যের। এসএমএস, নেট, চ্যাটিং, ডেটিং-এই হালফ্যাশনের আধুনিকতাকে বিষয় করেই তাই এগোতে হচ্ছে সাহিত্যকেও। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী, গভীরতা, দর্শন-এসবের স্থান কমে যাচ্ছে। এভাবে সাহিত্য হয় না। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মাচরণের যে বৈচিত্র্য, তাই হারিয়ে যাচ্ছে। Uniformity is a Killer. এমতাবস্থায় ডিকেন্স হার্ডিকেও নির্দিষ্ট বিষয় বলে দিয়ে সাহিত্য রচনা করতে দিলে, তাঁরা তা কতদূর পারতেন সন্দেহ আছে। এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের দায় কিছুটা সাহিত্যকেও নিতে হচ্ছে। আর তাই আজ তার গতিপথ রুদ্ধ। যাপনের একঘেয়েমি গ্রাস করেছে সাহিত্যকে...।”
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/17/2020