বাংলাদেশের কবি শহিদ কাদরি ১৯৪২ সালে ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতামহের নিবাস ছিল সিরাজগঞ্জে। পিতা ছিলেন একটি দৈনিক ইংরেজি কাগজের সম্পাদক ছিলেন। শহিদ কাদরি ১৯৫৮ সালে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করার পর আর লেখাপড়া করেননি। কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান টেলিভিশন কর্পোরেশনে কাজ করেছেন। পরে সোভিয়েত সংস্থার এপিএন এ বেশ কিছু দিন কাজ করেছেন। 'নির্বাণ' কবিতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু।
তাঁর লেখা শাণিত, সংহত ও ঋজু। ১৯৬৭ থেকে ২০০৯ এই সময়ের মধ্যে তিনি মোটে চারটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। কাব্যচর্চার প্রথম দিকে তাঁর চিন্তা-চেতনা ছিল নঞর্থক। অগ্রজ কবিদের মতো গ্রাম বা নগরের জীবনকে অস্তিবাচকতায় সমর্পিত করতে পারেননি। আবাল্য নাগরিক চৈতন্যে শহিদ কাদরির কাছে এ নগর গ্রহণগ্রস্ত। নগরের মালিন্য ,যান্ত্রিকতা, গ্লানি, অবক্ষয় তাঁকে নগরের প্রতি করেছে বিক্ষুব্ধ। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে হতাশা, যন্ত্রণা, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রাধান্য পেয়েছে।' উত্তরাধিকার' কাব্যে কবি যেন বৈরি বৃষ্টিতে স্নাত অসহায় নগরবাসী।
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা' প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। তাঁর দেশ তখন স্বাধীন। অতি অল্প সময়েই কবি অনুধাবন করলেন, রাষ্ট্র মানে কারফিউ, ১৪৪ ধারা, কাতারে কাতারে রাজবন্দি, মিছিল থেকে না ফেরা কনিষ্ঠ সহোদরের মুখ। এ কাব্যের বেশ কিছু কবিতা '৭১ এর বাংলাদেশ রূপায়িত হয়েছে। তিনি স্বদেশের বুকে চেয়েছিলেন শান্তির নীড়। তাঁর স্বপ্ন তাঁর দেশে পররাষ্ট্রনীতির বদলে থাকবে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি। মাইক্রোফোনের বদলে থাকবে বিহবল বকুলের ঘ্রাণ। জেনারেলরা রবীন্দ্রচর্চা করবেন, মন্ত্রীদের হাতে থাকবে সোনালী গিটার, থাকবে গীতবিতান, শিল্পকলার ইতিহাস হবে সেনাবাহিনীর পাঠ্য। 'কোথাও কোনও ক্রন্দন নেই ' তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যে হতাশার নিমজ্জন থেকে উত্তরণ ঘটেছে। যুদ্ধ ও হত্যায়, মারি ও মড়কে যে পার্থিব নরক তৈরি হয়েছে তার মধ্যেই তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চান। এ কাব্যে এসে জ্যোত্স্না, গোলাপ, চাঁদ, টিয়ে পাখি, সবুজ ঘাস, জুঁই, চামেলি আর চন্দ্রমল্লিকার কথা বল্লেন। প্রেম,প্রকৃতি আর গানের কথা কবিতার বিষয় হয়ে উঠলো। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি দেশের বাইরে।
শহিদ কাদরি তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলা অ্যাকাডেমি কর্তৃক ১৯৭৩ সালে পুরস্কৃত হন । 'একুশে পদক' পেয়েছেন ২০১১ সালে।
সূত্র: ittefaq.com.bd
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019