সজনীকান্ত দাস বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। শনিবারের চিঠি পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে তীব্র অথচ হাস্যরসাত্মক সমালোচনার মাধ্যমে তিনি সমকালীন সাহিত্য কর্মকাণ্ডে বিশেষ প্রাণসঞ্চার করছিলেন। ১৯৪৬-তে প্রকাশিত সজনীকান্ত বিরচিত ‘বাঙ্গালা গদ্যের প্রথম যুগ’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান সংযোজন।
শনিবারের চিঠি বাংলাভাষার অন্যতম বিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী যা বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক কাগজ। যোগানন্দ দাস এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তবে আদ্যোপান্ত শনিবারের চিঠি'র প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস। শনিবারের চিঠি দুই পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রথম প্রকাশ ১০ই শ্রাবণ ১৩৩১ তথা ১৯২৪ খৃস্টাব্দ। প্রতষ্ঠালগ্নে সম্পাদক ছিলেন যোগানন্দ দাস। তবে ভাদ্র ১৩৩৪ এবং ফালগুন ১৩৩৪ সংখ্যা থেকে সজনীকান্ত দাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মোহিতলাল মজুমদার এবং নিরোদ সি চৌধুরী।, এঁদের ভাষা ছিল ব্যঙ্গময় ; সমালোচনার লক্ষ্য ছিল পিত্ত জ্বালিয়ে দেয়া।
এই সাপ্তাহিক সাহিত্যপত্রটি ১৯৩০-৪০-এর দশকে কোলকাতাকেন্দ্রিক বাঙলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ সাড়া জাগিয়েছিল। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ কল্লোল, প্রগতি, কালি-কলম, পরিচয়, পূর্বাশা, কবিতা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি পত্রিকাসমূহের সঙ্গে শনিবারের চিঠি’র নাম জড়িত অবিচ্ছেদ্যভাবে। রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ চৌধুরী-শরৎচন্দ্র থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের সংখ্যায় সংখ্যায় তুলোধোনা করে পত্রিকাটি সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গিয়েছিল। এর সঙ্গে কল্লোল গোষ্ঠীর দ্বন্দ ছিল আক্রমণাত্মক ; পাশ্চাত্য আধুনিকতার স্পর্শে উদ্বেলিত কল্লোল যুগের চার পাশ ঘিরে ছিল শনি'র চক্র। তবে শনিবারের চিঠি সে সময়কার সাহিত্যচেতনাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
শনিবারের চিঠি'র অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল এর "সংবাদ সাহিত্য"।, এই অংশে সমসাময়িক কালে প্রকাশিত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি সম্পর্কে খবরাদি প্রকাশ করা হতো। ভাষা ছিল রম্য, কার্যত: ব্যঙ্গার্থক। কবি জীবনানন্দ দাশ যখন ছিলেন স্বলালোচিত তথন শনিবারের চিঠিতে তাঁর অন্তত ৩৩টি কবিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
এ কথা ভাবা অন্যায্য হবে যে, ব্যঙ্গবিদ্রূপেই শনিবারের চিঠি নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। শনিবারের চিঠি’তে তৎকালীন প্রধান লেখকদের রচনা বিপুল পরিমাণে প্রকাশিত হয়েছে।
শনিবারের চিঠি ছাড়াও তিনি বঙ্গশ্রী, শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা, অলকা প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এ ছাড়াও চিত্রলেখা, বিজলী, যুগবাণী, নূতন পত্রিকা, যুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশনায় তাঁর বড়ো ভূমিকা ছিল। শনিবারের চিঠি’র জন্মলগ্ন থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাঝে মাঝে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে শনিবারের চিঠি’র সঙ্গেই সজনীকান্ত দাসের নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সজনীকান্তের শ্রেষ্ঠ কীর্তিই শনিবারের চিঠি।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের অধিক। সজনীকান্তের কবিতাগ্রন্থ এগারোটি। এগুলো হলেো: পথ চলতে ঘাসের ফুল, বঙ্গরণভূমে, মনোদর্পণ, অঙ্গুষ্ঠ, রাজহংস, আলোআঁধারি, কেডস ও স্যান্ডাল পঁচিশে বৈশাখ , মানস সরোবর , ভাব ও ছন্দ এবং পান্থপাদপ।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/18/2020