অন্যায়ের জন্য শাস্তি দেওয়ার প্রচলন এই পৃথিবীতে বহু বহু বছর আগে থেকেই ছিল। সমাজের প্রধানরা তাঁদের ধর্মীয় বিদ্যাবুদ্ধি ও নৈতিক চিন্তাধারা ব্যবহার করে দোষীর শাস্তি বিধান করতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের এই চিন্তাধারা লিখিত রূপ পেয়ে আইন হিসাবে পরিণত হয়। তবে সে যুগে সব দেশেই কিন্তু আইনের সঙ্গে ধর্মের যোগ ছিল না। যেমন প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার আইনসূত্র, যেগুলি ‘কোড অফ হামুরাবি’ বলে পরিচিত, সেগুলি ছিল মোটামুটি ভাবে ধর্ম-নিরপেক্ষ -- ধর্ম ও তত্সংলগ্ন নীতিবোধের প্রভাব তার ওপর বিশেষ ছিল না। হামুরাবি ছিলেন ব্যাবিলনের রাজা। ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজত্বকালে বড় বড় পাথরের ওপর এই আইনগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়।
২৮২টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত এই আইনসমূহে বাণিজ্য, বিবাহ, দাসত্ব, কর্জ ও চৌর্য -- সব কিছুই স্থান পেয়েছিল। শাস্তির যে সব বিধান এখানে ছিল, আজকের যুগে সেগুলি বর্বর মনে হবে। চুরির অপরাধে আঙুল কেটে নেওয়া, বিবাহিত নারীকে কোনও পরপুরুষ চুম্বন করলে তাঁর ঠোঁট কেটে ফেলা, অপবাদ প্রচারের শাস্তি হল জিভ কেটে নেওয়া, বাড়ি ভেঙে পড়ে বাড়ির মালিকের পুত্রের মৃত্যু হলে, গৃহনির্মাতার পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইত্যাদি।
অনুমান করা হয় যে, তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মিশর ও চিন দেশেও ধর্ম-নিরপেক্ষ আইনের প্রচলন কিছুটা ছিল। অন্য পক্ষে পুরনো যুগে হিন্দু, ইহুদি, খ্রিশ্চান ও মুসলিম সমাজের আইনের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বেদ-উপনিষদ, বাইবেল ও কোরানের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাইবেলের ‘টেন কমান্ডমেণ্ট’-এর সঙ্গে যে সব আইনের কথা লেখা হয়েছিল, সেগুলিতে শাস্তির বহরও অনেকটা হামুরাবির বিধানের মতোই কঠোর, যাকে অনেক সময় বলা হয় ‘আই ফোর অ্যান আই, টুথ ফর অ্যা টুথ’ (চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত) জাতীয় চিন্তাধারা-প্রসূত।
সময়ের সাথে সাথে আইন ও বিচার ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন এসেছে। এ এক নিরন্তর বিকাশশীল বিষয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020