আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ‘ব্রেক থ্রু’ এল ১৭৯৬ সালে। ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার আবিষ্কার করেন বসন্তের টিকা। ইংরেজ জীবাণু গবেষক এডওয়ার্ড অ্যান্টনি জেনারকে বলা হয় প্রতিষেধক বিদ্যার জনক। তখন বসন্ত ছিল এক মারাত্মক আতঙ্ক। মহামারি বসন্তে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। জেনারের টিকা সেই মহামারি নির্মূল করল। এই আবিষ্কার নানা জীবাণুঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের সুস্থ থাকার লড়াইকে এক অন্য মাত্রা দিল। আবিষ্কৃত হল আরও বহু রোগের প্রতিষেধক। সেই পথেই ১৯৭৭ সালে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গেছে কালান্তক গুটিবসন্ত।
আগে বিশ্বাস ছিল খারাপ হাওয়া, দূষিত জল বা নানা অতিপ্রাকৃত জিনিসই নানা রোগের জন্য দায়ী। সেই বিশ্বাস, সেই ধারণায় আঘাত হানলেন লুই পাস্তুর। ১৮৬০ সালে ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ লুই পাস্তুর দেখালেন যে জীবাণুই হল নানা রোগের কারণ। সেই জীবাণুই আমাদের খাদ্য, পানীয় প্রভৃতিকে দূষিত করে এবং সেখান থেকে আসে রোগ। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার জন্ম দিল জীবাণুতত্ত্বের (Microbiology)।
এই আবিষ্কার খারিজ করে দিল পূর্ববর্তী ‘স্পনটেনিয়াস রিজেনারেশন’ তত্ত্ব (Theory of spoteneous regeneration)। এই তত্ত্ব অনুযায়ী লুই পাস্তুরের পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীরা মনে করতেন জীবাণুগুলি আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু লুই পাস্তুর প্রাস্তুর প্রমাণ করেন যে, জীবাণুগুলি শুধুমাত্র অন্য কোনও জীবাণু থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীতে যে প্রাণ থেকেই প্রাণের সৃষ্টি, কোনও অতি প্রাকৃত পদ্ধতিতে নয় – তা বিজ্ঞানের একটি বুনিয়াদী তত্ত্ব হিসাবে গৃহীত হল।
আবিষ্কৃত হল টাইফায়েড, কলেরা, নিউমোনিয়া, ডিপথেরিয়া, প্লেগ বা যক্ষ্মার মতো প্রাণঘাতী নানা রোগের জীবাণু। লুই পাস্তুর স্বয়ং ১৮৮৫ সালে জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেন, যে মারণরোগের কোনও চিকিৎসাই তার আগে ছিল না। বিখ্যাত জার্মান জীবাণুবিদ রর্বাট হাইনরিখ হারমান কখ আবিষ্কার করলেন যক্ষ্মা, কলেরা এবং অ্যানথ্র্যাক্সের জীবাণু। কখকে আধুনিক জীবাণুবিদ্যার জনক বলা হয়। সুইস বিজ্ঞানী আলেকজান্দার এমিল জা ইয়ারসিন ১৮৮৮ সালে প্লেগের জীবাণু আবিষ্কার করলেন।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019