আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : পল ভিলার্ড
গামারশ্মিগুলি হল তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গ যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুবই কম। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পল ভিলার্ড এই রশ্মি আবিষ্কার করেন এবং গামারশ্মি নাম দেন আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।
এই ব্রহ্মাণ্ডে আছে শক্তির নানা রূপ এবং বিভিন্ন উপায়ে তারা প্রতিভাত হয়। একটা সাধারণ রূপ হল বিকিরণ। বিকিরণ হল তড়িৎ-চুম্বকীয় বল দ্বারা উত্পাদিত তরঙ্গশক্তি। এরা নানা প্রকারের, যাদের ক্ষমতা তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় -- আলফা যারা সরলরেখায় ধাবিত হয়। কিন্তু এদের মাত্রা বিভিন্ন; আলফা রশ্মি হল সব থেকে দুর্বল, মানুষের চামড়া ভেদ করে সজীব তন্তু পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, গামারশ্মি হল সব থেকে বলিষ্ঠ, কেবলমাত্র সিসা-র মতন ঘন পদার্থ একে প্রতিহত করতে পারে।
আবার, গামারশ্মি তাদের গঠনে আলফা ও বিটা থেকে ভিন্ন। আলফা ও বিটা রশ্মিদ্বয় অসংবদ্ধ সাব-অ্যাটোমিক কণা দ্বারা গঠিত; যার ফলে এই রশ্মিগুলিকে সহজেই বিপথে পাঠানো সম্ভব অল্প ঘন বস্তুর দ্বারা। গামারশ্মিগুলি অন্য বিভিন্ন স্তরের - শুধুমাত্র কঠিন ঘনবস্তু এদের অন্য পথে চালিত করতে পারে। বস্তুত, গামা রশ্মি হল সব থেকে সবল বিকিরণ - যার ফলে আণবিক বিকিরণ এতো ভয়াবহ। এই উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ মানুষের তন্তুকে বিনষ্ট করে দিতে পারে এবং পরিব্যক্তি (মিউটেশন) ঘটাতে পারে।
গামারশ্মিগুলির সব থেকে ঔত্সুক্য উদ্দীপনকারী চরিত্র হল যে এদের শক্তির স্তর বিভিন্ন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শক্তি-মাত্রা এত কমে বাড়ে যে সব রকমের মানদণ্ডে এগুলি ব্যবহার্য, তবে এক্স রে থেকে এদের শক্তি-মাত্রা কম।
মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্রই গামারশ্মি দেখতে পাওয়া যায়। সব থেকে ভালো উদাহরণ হল সূর্য এবং পালসার। এরা সকলেই সুবৃহৎ শক্তির উত্স -- সুবৃহৎ আণবিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে হাইড্রোজেন দহনের মধ্য দিয়ে। ফলে রশ্মির আকারে বিশাল বিকিরণ নির্গত হয়। পৃথিবীর রক্ষাপ্রদ বায়ুমণ্ডলের বাইরে বিকিরণের রূপ নেয় কসমিক রশ্মির আকারে। কসমিক রশ্মি বিশাল শক্তির অধিকারী গামারশ্মির কারণে।
দু’টি আইসোটোপ, কোবাল্ট-৬০ এবং পটাসিয়াম-৪০ গামারশ্মি নির্গত করে। কোবাল্ট-৬০ তৈরি হয় ত্বরক যন্ত্রে (অ্যাক্সিলিরেটর) এবং হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়। পটাসিয়াম-৪০ আসে প্রকৃতি থেকে।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/22/2019