আবিষ্কার : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : সুব্রহ্মনিয়ন চন্দ্রশেখর
সুব্রহ্মনিয়ন চন্দ্রশেখর ছাত্রাবস্থায় বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটনের লেখা ‘দি ইন্টারনাল কনস্টিটিউশন অফ দ্য স্টারস’ বইটি পড়ে জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানে আকৃষ্ট হন। নক্ষত্রদের মধ্যে ‘হোয়াইট ডোয়ারফ’ বা শ্বেত বামন অন্যান্য নক্ষত্রের থেকে আলাদা। আসলে শ্বেত বামন একটি মৃত নক্ষত্র। চন্দ্রশেখরের মতে শ্বেত বামনের এই স্বাতন্ত্র্য একেবারে মৌলিক।
শ্বেত বামনের স্বাতন্ত্র্যের কথা প্রথম বলেন আর এইচ ফাউলার। তাঁর মতে শ্বেত বামনদের অভ্যন্তরে ইলেকট্রন গ্যাসের ঘনত্ব এত বেশি যে তাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আওতায় আনতে হবে। এখান থেকেই চন্দ্রশেখরের কাজ শুরু, যার পরিণতি তাঁর বিরাট আবিষ্কার। ফাউলারের কাজে তিনি পলিট্রপির তত্ত্ব ঢোকালেন। তবে এতে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কারণ শ্বেত বামনে বিরাজমান ঘনত্ব ও ফের্মি-ভরবেগ এত বেশি হবে যে আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব বাদ দিয়ে কোনও কাজ সম্ভব নয়। চন্দ্রশেখর দেখলেন, নক্ষত্রের অভ্যন্তরে ইলেকট্রন গ্যাসের ঘনত্ব সসীম হতে গেলে তার অসীম ভর থাকবে। চন্দ্রশেখর গবেষণা করে দেখালেন, যদি কোনও নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে সামান্য ভারী হয় আর তার জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে যদি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে তবে তা ততক্ষণ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হবে যতক্ষণ না তার ব্যাসার্ধ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। প্রতি একক আয়নে ভরের এই পরিমাণকে বলা হয় ‘চন্দ্রশেখর সীমা’।
শ্বেত বামনেরা মৃত নক্ষত্র। তাদের ভিতরকার কেন্দ্রীয় জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে গেছে। এ ধরনের নক্ষত্রে মাধ্যাকর্ষণ প্রাধান্য পায়। সনাতনী পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী এই মাধ্যাকর্ষণ-জনিত সঙ্কোচনকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ১৯২৭ সালে ফাউলার বললেন, নক্ষত্রের ভিতরে একটি বলের অস্তিত্ব আছে যা বহির্মুখী। শ্বেত বামন খুব ঘন হয়ে গেলে এই বল সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই বলই নক্ষত্রের পূর্ণ সঙ্কোচন বন্ধ করে। এ কথা প্রমাণ করতে গিয়ে ফাউলার আপেক্ষিকতাবাদ-বর্জিত কোয়ান্টাম পরিসংখ্যান বা ফের্মি-ডিরাক সাংখ্যায়ণ কাজে লাগালেন। চন্দ্রশেখর তত্ত্বের মধ্যে আপেক্ষিকতাবাদ সংযুক্ত করলেন। তিনি দেখালেন একটি সীমানার পর অভ্যন্তরীণ বহির্মুখী বল ব্যাসার্ধ শূন্য হয়ে জোয়ার ব্যাপারটিকে আটকাতে পারে না।
চন্দ্রশেখর তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণ আজ অনেক পাওয়া গেছে। তবে প্রথমে কুইপার শ্বেত বামন-এর পরীক্ষালব্ধ ফলের সঙ্গে চন্দ্রশেখরের গণনা মিলে যায়। অচিরেই বোঝা গেল চন্দ্রশেখর কেবল শ্বেত বামনের উত্পত্তি ব্যাখ্যা করেছেন তা নয়, চরম তাপ ও চাপে বস্তুর অবস্থা সম্পর্কে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
এই আবিষ্কারের পঞ্চাশ বত্সর পর চন্দ্রশেখরকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/17/2020