অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

কাগজ কাহিনি

কাগজ কাহিনি

সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজার সামনে থেকে খবরের কাগজটি তুলে আনা থেকে রাতে হাতের বই বা পত্রিকাটি বন্ধ করে রেখে ঘুমনো পর্যন্ত আমরা নানা ভাবে কাগজ ব্যবহার করি। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলের বই, বাসের টিকিট, কাগজের টাকা, অফিসের ফাইল, চিঠি, প্রিন্ট আউট সব কিছু। এগুলো সবই প্রধানত কাগজের ওপর নির্ভরশীল। এগুলো এতটাই আমাদের জীবনের অঙ্গ যে কাগজহীন পৃথিবী আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সাই লুন নামে এক চিনা দালাল কাগজ আবিষ্কার করেছিলেন প্রায় ২০০০ বছর আগে, পুরনো জাল ও কাপড়ের টুকরো দিয়ে। নেকড়া এবং গাছ সেদ্ধ করে, বারবার নাড়িয়ে চিনারা কাগজ বানাত।

তার পর মণ্ডের মধ্যে একটি চালুনি ডুবিয়ে সেটা আনুভূমিক ভাবে তোলা হত, তার মধ্যে মণ্ডের স্তর থাকত। চালুনির ছিদ্র দিয়ে বাড়তি জল বেরিয়ে যেত। তার পর মণ্ডটি চেপে ও শুকিয়ে কাগজ তৈরি করা হত। নীতিগত ভাবে সেই একই পদ্ধতি আজও অবলম্বন করা হয়। পেপার শব্দটি মিশরের প্যাপিরাস শব্দ থেকে এসেছে। প্যাপিরাস হল এক ধরনের নলখাগড়া। প্রায় ৫০০০ বছর আগে এর কলম দিয়ে মিশরীয়রা লিখত। প্যাপিরাস আর পেপার এক নয়। মাদুরের মতো করে নলখাগড়া সাজিয়ে চেপে তার ওপর নেকড়া বা গাছের অংশ ফেলে পেপার তৈরি হত। এর ফলে সেলুলোজের যে বন্ধন তৈরি হত, তা রাসায়নিক-হাইড্রোজেন বন্ধন। এর ওজনের জন্য কাগজ, লোহার থেকেও শক্তিশালী হত। মিশরেরও আগে সুমেরু সভ্যতা (আজকের ইরাক) মাটির ট্যাবলেট তৈরি করত। তামিলনাডুতে পাম গাছের পাতায় পাণ্ডুলিপি তৈরি কর হত। চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে পার্চমেন্ট (গাছের ছাল) ব্যবহার করা হত। গুটেনবার্গের বাইবেল, যা পৃথিবীর প্রথম বই, যে পরিমাণ ছাপা হয়েছিল তার ১৮০টি ছিল কাগজে, ৩০ টি পার্চমেন্টে। এগুলোর কোনওটাই আজকের মতো রসায়নাগারে তৈরি কাগজ ছিল না। এর মধ্যে লেখা অত্যন্ত কঠিন ছিল। গায়ের জোরে অক্ষর খোদাই করতে হত। কাগজের মণ্ড-ভাবের অর্থ নরম কাগজ, যাতে পেন্সিলের মতো হাল্কা বস্তু দিয়েও লেখা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে চিনা কাগজ প্রস্তুতকারকদের আরবরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পরই ইউরোপে কাগজ তৈরি শুরু হয়। কাগজ ইউরোপে পৌঁছেছিল দ্বাদশ শতাব্দীতেই, যখন জাঁ মন্টগলফিয়ের সিরিয়ার সারাসেন্স থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে যান এবং সেখানে কাগজ কল তৈরি করেন। একটি কাগজ কলে দাস হিসেবে কাজ করার সময় তিনি কাগজ তৈরির কাজটি শেখেন।

কাগজ তৈরির মূল কাজ অর্থাৎ মণ্ড তৈরি এবং শুকনোর বিষয়টা এক থাকলেও কাগজ তৈরিতে প্রভূত প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে। সেই উন্নতি এতটাই যে সেই প্রযুক্তি পশ্চিম বিশ্ব থেকে চিনে রফতানি করা হয়েছে। প্রযুক্তি সত্যিই পৃথিবীর বৃত্তটা সম্পূর্ণ করেছে। যে কাগজ তৈরি একটি কুটির শিল্প হিসেবে শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে একটি পুরোপুরি যন্ত্রচালিত বিষয়। সব চেয়ে পরিচিত কাগজ তৈরির যন্ত্রের নাম ফরড্রিনিয়ার- ১৮০৩ সালে দুই ভাই এই যন্ত্র তৈরি করেছিলেন, তাদের নামেই এই যন্ত্রের নামকরণ হয়েছে। লেখার জন্য কাগজের জনপ্রিয়তা এত বেড়ে যায় যে খুব দ্রুত নেকড়ার অভাব দেখা দেয়। সংবাদপত্র সেই ১৬০০ সাল থেকে পথচলা শুরু করলেও বর্তমানে তা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে।

আরও বেশি পরিমাণে মণ্ড তৈরির উৎসের জন্য খোঁজ করা শুরু হল। ফরাসি প্রকৃতিবিজ্ঞানী দ্য মওরে লক্ষ করলেন বোলতা কাঠ খায় এবং তাদের লালা থেকে মণ্ড তৈরি করে। মণ্ডটি চিরুনির আকারে তৈরি হয় এবং শুকনোর পর বেশ শক্তপোক্ত কাগজের মতো বাসা তৈরি হয়।

আজকাল বেশির ভাগ কাগজ কাঠের মণ্ড থেকে তৈরি হয়। তোমাদের স্কুলের খাতা, সংবাদপত্র, পত্রিকা, পোস্টার, খাম সবই কাঠের মণ্ড থেকে তৈরি। সংবাদপত্র নিউজপ্রিন্টে ছাপা, সেটাও কাঠের মণ্ড থেকে তৈরি। কাগজ রোল করে পালিশ করলে উজ্জ্বলতা আসে। কাঠের মণ্ডের ফাইবারের দৈর্ঘ্য নেকড়ার থেকে বড় হয়। নেকড়া এবং গাছ এখনও ব্যবহার হয় বন্ড পেপার, টাকা, আঁকার খাতা ও ব্লটিং পেপার তৈরির জন্য। উনবিংশ শতাব্দীর আগে কাগজ শুধুমাত্র লেখার জন্যই ব্যবহার করা হত।

তোমরা কি জান, প্রথম কবে খাম তৈরি হয় ? ১৮৪১ সালে। কাগজের ব্যাগ তৈরি হয় ১৮৫০ সালে। মেশিনে তৈরি বড় কাগজের বাক্স তৈরি হয় ১৮৯৪ সালে (কার্টন বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার)। তোমাদের জানতে ইচ্ছা হয় না, পাউরুটি চিরকাল কাগজে মোড়ানো হত কি না। এটা শুরু হয় ১৯১০ সাল থেকে। কাগজ তৈরির পদ্ধতিতে নানা পরিবর্তন সাধন করে নানা গুণমানের কাগজ তৈরি করা সম্ভব, এ কথা উপলব্ধি করার মধ্য দিয়েই কাগজ তৈরি একটি বিরাট শিল্পে পরিণত হয়েছে। মাখন মোড়ানোর জন্য প্রয়োজন মোটা, মসৃণ এবং চর্বিনিরোধক কাগজ। কাগজ তৈরির সময় তাতে মোম লাগিয়ে এই ধরনের কাগজ তৈরি করা সম্ভব। কাগজ তৈরির সময় প্যারাফিন লাগালে কাগজ কিছুটা পুরু হয়ে যায়, এই ধরনের কাগজ দিয়ে কাপ তৈরি হয়।

কাগজ তৈরির সময় রজন লাগালে কাগজ পাউরুটি মোড়ানোর উপযুক্ত হয়। অন্য এক ধরনের রজন লাগালে কাগজ বোতলের ঢাকনা তৈরির কাজে লাগে। কাগজ তৈরির প্রক্রিয়ায় কাগজে এক ধরনের কোটিং ব্যবহার করা হয়। কাগজের এক দিকে ঘষে তুলে দেওয়া যায় এমন কোটিং লাগালে তা দিয়ে স্যান্ড পেপার তৈরি হয়। এক দিকে আঠা দিয়ে কোটিং দিলে স্ট্যাম্প, স্টিকার ইত্যাদি তৈরি হয়। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কাগজ তৈরি করলে তা ছেঁড়া যায় না, জলীয় বাষ্প, গ্যাস, তেল, পতঙ্গ, ইঁদুর কাগজের কোনও ক্ষতি করতে পারেনা.....এটা কি কোনও অবাক করার মতো তথ্য যে কাগজই হল মানুষের তৈরি সেই পণ্য , যা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় ?

কে ভি সুব্রহমণিয়ম, মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট, সারব্রুকেন

সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/11/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate