ওয়াল্ট ডিজনির নাম শোনেনি অথচ কার্টুন ভালোবাসে এমন মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। ডিজনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সারাটা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। সাফল্যের সুউচ্চ শিখরে অবস্থান করার পরও সৃষ্টিসাধনা থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি। তাঁকে সবাই ‘মিকিমাউস’ কার্টুন চরিত্রটির সৃষ্টিকর্তা হিসেবে জানে। অথচ ৬৫ বছরের জীবনে ছোটদের আনন্দ দেওয়ার মতো বহু কিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর ভেতর ডিজনিল্যান্ডের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।
ডিজনি ছিলেন এক জন সফল শিল্পী, সফল চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট লেখক, কণ্ঠস্বরদানকারী, দোভাষী এবং কার্টুন ছবি নির্মাতা। ডিজনি তাঁর ভাই রয় ও ডিজনির সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজনি প্রোডাকশন’। পরে এ প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে রাখা হয় ‘ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি’। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ৩০০০ কোটি ডলার।
আজ থেকে ১০৬ বছর আগে ১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিজনি আমেরিকার শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল এলিয়াস ডিজনি। মা ছিলেন ফ্লোরা কল ডিজনি। শিকাগোতে জন্ম হলেও ডিজনির জন্মের পরপরই তাঁর বাবা সবাইকে নিয়ে মিসোউরি অঙ্গরাজ্যের মারসেলি শহরে চলে যান। সেখানেই ডিজনির শিশুকাল ও কৈশোর কাটে।
ছেলেবেলা থেকে ডিজনির ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল। পাড়া-প্রতিবেশী বন্ধুদের ছবি এঁকে নিজের হাত খরচ নিজেই জোগাতেন তিনি। পরে শিকাগোর ম্যাক কিনলে হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে অংকনবিদ্যাকে ভালো মতো আয়ত্ত করেন। ওয়াল্ট ডিজনির প্রতিষ্ঠার পেছনে তাঁর মা ও বড় ভাই রয় ডিজনির অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো।
১৯৩২ সালের ওয়াল্ট ডিজনি নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম রঙিন কার্টুন ছবি ‘ফ্লাওয়ার্স অ্যান্ড ট্রিস’। এ কার্টুনটি নিয়ে আসে ওয়াল্ট ডিজনির জীবনে প্রথম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড। ১৯৩৭ সালে মাল্টিপ্ল্যান ক্যামেরা পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি নির্মাণ করেন আরেকটি বিখ্যাত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য ওল্ড মিল’। ডিজনি নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডার্ফস’ নামের এ ছবিটি ওয়াল্ট ডিজনিকে প্রতিষ্ঠা পেতে সাহায্য করে। এর পর তিনি পিনোকিয়ো, ফান্টাসিয়া, ডাম্বো এবং বাম্বির মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যান একের পর এক।
তাঁর স্বপ্ন ছিল কার্টুনের মধ্য দিয়ে এমন একটি চরিত্র সৃষ্টি করা, যেটিকে এক নামে সবাই চিনবে। ছোট-বড় সবার কাছে সমান জনপ্রিয়তা পাবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যান ওয়াল্ট ডিজনি। আর তারই ফলে সৃষ্টি হয় কার্টুন ইতিহাসের সব চেয়ে গতিশীল, চটপটে ও জনপ্রিয় চরিত্র ‘মিকিমাউস’। ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম মিকিমাউস আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম কার্টুনটির নাম ছিল ‘স্টিমবোট হুইল’। এটাতে মিকিমাউসের ভূমিকায় কণ্ঠ দেন ওয়াল্ট ডিজনি নিজে। অবশ্য ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা মিকিমাউসের ভূমিকায় কণ্ঠদান করে গেছেন।
কার্টুন চরিত্র মিকিমাউসের মতো আরেকটি বিশ্বখ্যাত কাজ ‘ডিজনিল্যান্ড’। এটিও ওয়াল্ট ডিজনির কল্পনার বাস্তব রূপ। ওয়াল্ট ডিজনি তাঁর রুচি, প্রতিভা ও সৃজনশীলতাকে চূড়ান্ত ভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডিজনিল্যান্ড’। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানাহেইমে প্রতিষ্ঠিত এ থিম পার্কটি প্রতি দিন লাখ লাখ দর্শক পরিদর্শন করেন। ডিজনিল্যান্ড নামের এই থিম পার্কটির উদ্বোধন হয় ১৯৫৫ সালের ১৭ জুলাই। এখানে আছে চোখ জুড়োনো সমুদ্র, মরুভূমি, জঙ্গল, হাজারো রকম রাইডিং, খেলনা ও সিনেমা হল। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পরিবর্তনের প্রামাণ্য নিদর্শন। আছে যুদ্ধমাঠ, বিখ্যাত সব দুর্গ ও প্রাসাদের হুবহু নমুনা। এক হিসেবে জানা যায়, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ৫১৫০ লক্ষ দর্শক ডিজনিল্যান্ড পরিদর্শন করেন।
ক্ষণজন্মা শিল্পী, মিকিমাউস ও ডিজনিল্যান্ডের স্রষ্টা ওয়াল্ট ডিজনি মারা যান ১৯৬৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/20/2020