ডেভিড হিলবার্টের বয়স তখন মাত্র ৩১, যখন তিনি কোয়েনিকসবার্গের ফুল প্রফেসর নিযুক্ত হন। দু’ বছরের মধ্যে তিনি গোয়েটিংগেনে একটি সম্মানিত পদে নিযুক্ত হন। সেখানেই তিনি পেশাগত জীবনের বাকি সময়টা শিক্ষকতা করেন।
হিলবার্ট প্রথমে ইনভ্যারিয়েন্ট তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন এবং ১৮৮৮ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত বুনিয়াদি উপপাদ্যটি প্রমাণ করেন। যখন তিনি তাঁর কাজটি ‘মাথেমাটিশে আনালেন’ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য জমা দেন, তখন তার সম্পাদক বিখ্যাত ফেলিক্স ক্লাইন লেখেন: সাধারণ বীজগণিত নিয়ে আনালেনে প্রকাশিত যাবতীয় কাজের মধ্যে এটা যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই।
জ্যামিতি নিয়ে হিলবার্টের কাজগুলি ওই বিষয়ে ইউক্লিডের কাজের পর সব চেয়ে প্রভাবশালী। ইউক্লিডের জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধ সম্পর্কে ধারাবাহিক চর্চা করে হিলবার্ট ২১টি স্বতঃসিদ্ধের প্রস্তাব করেন এবং সেগুলিকে ব্যাখ্যা করেন। তার এই কাজগুলি তিনি প্রকাশও করেন।
১৮৯৯ সালের ‘গ্রুনডলাগেন ডেয়ার জিওমেট্রি’ বইটি জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধগুলিকে নির্দিষ্ট চেহারা দেয়। এই বইটি অঙ্কে স্বতঃসিদ্ধের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, যা বিংশ শতাব্দী জুড়ে এই বিষয়টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে কাজ করেছিল।
শতাব্দী পরিবর্তনের মুখে, ১৯০০ সালে ডেভিড হিলবার্টকে অঙ্কবিদদের কংগ্রেসে ভাষণ দিতে বলা হয়। তিনি অঙ্কের সমস্যা নিয়ে বলেন। তার ভাষণ পরবর্তী শতাব্দীতে অঙ্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদে ভরে ছিল। তিনি মনে করেছিলেন সমস্যাই বিষয়টির সজীবতার চিহ্ন। হিলবার্ট অঙ্কের দুনিয়ার কাছে ২৩টি সমস্যা রেখেছিলেন। তাঁর কথায়: অঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে এই নির্দিষ্ট সমস্যাগুলি আপনাদের কাছে পেশ করার অনুমতি দিন, এগুলি নিয়ে চর্চার মধ্য দিয়েই এই বিজ্ঞান এগোবে বলে আমি আশা করি।
এই ২৩টি সমস্যা অঙ্কবিদদের কিছু মৌলিক সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে (আজও)।
হিলবার্টের দেওয়া সমস্যাগুলির মধ্যে ছিল কন্টিনুয়াম হাইপোথেসিস, বাস্তব সংখ্যাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, গোল্ডবাখের কনজেকচার, বীজগাণিতিক সংখ্যার শক্তির উৎকর্ষ পরিমাপ, রাইমান হাইপোথেসিস, ডিরিকলেটের তত্ত্বের বিস্তার ও আরও অনেক কিছু। এর মধ্যে অনেকগুলি সমস্যার সমাধান গত শতকেই হয়েছে এবং যখনই কোনও একটির সমাধান হয়েছে, তা অঙ্কের ক্ষেত্রে বড় ঘটনা বলে মান্যতা পেয়েছে।
বর্তমানে হিলবার্টের নাম মনে রাখা হয় অসীম মাত্রার স্থানের ধারণার জন্য, পরবর্তীকালে একে বলা হয় হিলবার্টের স্থান। এই ধারণা অঙ্কের বিশ্লেষণ এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অখণ্ড সমীকরণের ফলাফল ব্যবহার করে হিলবার্ট অঙ্কভিত্তিক পদার্থবিদ্যার বিকাশে অবদান রাখেন। তাঁর কাজের বিষয় ছিল তেজস্ক্রিয়তায় গতিশীল গ্যাসের তত্ত্ব।
অনেকে দাবি করেন, আইনস্টাইনের আগেই ১৯১৫ সালে হিলবার্ট সাধারণ আপেক্ষিকতার যথাযথ ক্ষেত্র সমীকরণ আবিষ্কার করেন, কিন্তু কখনও তা দাবি করেননি। এটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়, যদিও হিলবার্ট একক ভাবে একই ধরনের ধারণা প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৩৪ এবং ১৯৩৯ সালে হিলবার্ট দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন গ্রুন্ডলাগেন ডেয়ার মাথেমাটিক (পল বার্নের সঙ্গে যৌথভাবে), যার লক্ষ্য ছিল একটি ‘প্রুফ থিওরি’-র দিকে এগিয়ে দেওয়া, যাতে অঙ্কের ধারাবাহিকতাকে যাচাই করা যায়। কুর্ট গোয়েডেল তাঁর বিখ্যাত গবেষণাপত্রে দেখান, এই লক্ষ্য অর্জনযোগ্য নয়।
হিলবার্ট অঙ্কের বহু শাখায় অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইনভ্যারিয়েন্ট, বীজগাণিতিক সংখ্যা, ফাংশনাল অ্যানালিসিস, ইন্টেগ্রাল ইকুয়েশনস, অঙ্কভিত্তিক পদার্থবিদ্যা এবং ক্যালকুলাস অফ ভ্যারিয়েশন। হিলবার্টের অঙ্কের দক্ষতা সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছিলেন তাঁর প্রথম ছাত্র অটো ব্লুমেনথাল :নতুন ভাবনার সৃষ্টির বিষয়ে বলতে গেলে আমি মিনকউস্কিকে ওপরে রাখব, ধ্রুপদী ক্ষেত্রে ওপরে রাখবো গস, গ্যালোইস এবং রাইমানকে। কিন্তু যদি অন্তর্দৃষ্টির কথা ওঠে, তা হলে বিখ্যাতদের মধ্যে খুব কম জনই হিলবার্টের সমকক্ষ।
হিলবার্টের বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন, অঙ্কবিদ হেরমান ভেইল, বিখ্যাত বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন ইমানুয়েল লাস্কের এবং লজিশিয়ান ফ্রাঙ্ক জার্মেলো।
হিলবার্ট অনেক সম্মান পেয়েছেন। ১৯০৫ সালে হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স হিলবার্টকে বিশেষ সম্মান দেয়। ১৯৩০ সালে হিলবার্ট অবসর নেন এবং কোয়েনিকসবার্গ শহর তাঁকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দেয়। তিনি একটি ভাষণ দেন, যাতে তাঁর অঙ্কের প্রতি আগ্রহ এবং তাঁর অঙ্কের সমস্যা সমাধানে উৎসর্গীকৃত জীবন সম্পর্কে জানা যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/1/2020