নিকোলাস কোপার্নিকাস - অন্ধকার, অজ্ঞতার যুগে আলো হয়ে জন্ম নেওয়া এক বিজ্ঞানীর নাম। নিতান্ত সত্য কথাটি যখন মুখ ফুটে বলা যেত না সেই সময়ের সন্তান তিনি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন আকাশের গ্রহ, তারার গতিবিধি। শেষে লিখে গেছেন তৎকালীন ভুল ধারণার বিরুদ্ধে। কিন্তু এত সহজ ছিল না তথাকথিত জ্ঞানীদের বিরুদ্ধে কথা বলা।
তৎকালীন পাদরিরা মানতেন যে পৃথিবীই সব কিছুর কেন্দ্র। অর্থাৎ সৌরজগৎ হল পৃথিবীকেন্দ্রিক - পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে সূর্য আর অন্যান্য গ্রহগুলো। দীর্ঘদিনের এই বিশ্বাস তত দিনে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছিল সাধারণ মানুষদের মাঝে। কোপার্নিকাস তাঁর পর্যবেক্ষণে বুঝতে পারেন এই ধারণায় কিছু একটা সমস্যা আছে। কিন্তু আজ যা অতি সহজেই বলা যাচ্ছে ‘ভুল’ সে দিন তা বলা ছিল অসম্ভব। এত বিজ্ঞ মানুষেরা কি ভুল করতে পারে! কোপার্নিকাস তাই আরও পর্যবেক্ষণ করলেন। এর পর লিখলেন তাঁর বই ‘নভোবস্তুসমূহের পরিভ্রমণ সম্পর্কে’। এটি লেখা শেষ করেন তিনি ১৫৩০ সালে। কিন্তু প্রকাশিত হয় ১৫৪৩-এ! অন্ধ অনুকরণের সে যুগে তিনি বইটি প্রকাশের সাহস করতে পারেননি প্রথমে। বইটি প্রকাশের পর নিকোলাস বেঁচে থাকলে কী হত তা-ও বলা মুশকিল! কারণ তার পরপরই পাদরিদের রোষানলে পড়ে বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় ২০০ বছরের জন্য! কিন্তু সত্যকে তো আর এ ভাবে আটকে রাখা যায় না। কোপার্নিকাসের পথ ধরে তাই হেঁটে আসেন নতুন সাধকেরা --- টাইকো ব্রাহে, জোহান কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলাই, জিওর্দানো ব্রুনোরা! কোপার্নিকাসের জন্ম পোল্যান্ডে। ১৪৭৩ এর ১৯ ফেব্রুয়ারি - ভিশ্চুলা নগরীর বন্দর এলাকা থর্ন-এ। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র ও আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। অধ্যয়ন শেষে বাল্টিক সাগরের ধারে এক গির্জায় যাজকের পদ লাভ করেন। গির্জাটি ছিল একটি পাহাড়ের উপর। এর কাছাকাছি একটি গম্বুজ থেকেই নিকোলাস তাঁর পর্যবেক্ষণ চালাতেন।
কোপার্নিকাস লক্ষ করেন সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে গ্রহগুলোর গতিপথ সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। পৃথিবীকে গায়ের জোরে কেন্দ্রে বসালেই অযথা জটিলতা তৈরি হয়। তাঁর ধারণা যদিও সম্পূর্ণ ঠিক ছিল না। গ্রহগুলোর গতিপথ নিয়ে তাঁর চিন্তা ভুল ছিল। তিনিই প্রথম সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে ঠিক ধারণার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তাঁর পথ ধরে ধীরে ধীরে আলোর পথ দেখান টাইকো ব্রাহে, জোহানেস কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলাইরা। তাঁরা কোপার্নিকাসের ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/2/2019