অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বেলুনে চেপে প্রায় নাকি মহাকাশের কাছাকাছি

বেলুনে চেপে প্রায় নাকি মহাকাশের কাছাকাছি

কম্পাস , থার্মোমিটার , ব্র্যান্ডির কয়েকটা বোতল আর ছ’টা পায়রা !প্রথম বেলুনযাত্রায় এটাই ছিল মহাকাশ বিজ্ঞানী জেমস গ্লেইসারের সরঞ্জাম৷ দিনটা ছিল ১৮৬২ -এর ৫ ডিসেম্বর৷ সহযাত্রী হেনরি কক্সওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে বেলুনযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিলেন গ্লেইসার৷ ইচ্ছে ছিল , আকাশপথে অনেক উঁচুতে গিয়ে পাখিগুলোকে ছেড়ে দেবেন তাঁরা৷ যাত্রাপথের শোভা দেখতে দেখতে কখন যে মহাশূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন , খেয়ালই ছিল না গ্লেইসারের৷ নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় লিখেছেন , তিন মাইল ওঠার পর একটা পায়রাকে ছেড়ে দিতেই ডানা মেলার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কাগজের টুকরোর মতো পড়ে গেল৷ চার মাইল উপরে উঠে আরও একটা পায়রাকে ছাড়লেন তাঁরা৷ সেটা গোল গোল পাক খেয়ে ঢেলার মতো নীচে পড়ল৷ চার ও পাঁচ মাইলের মধ্যে তৃতীয় পায়রাটাকেও ছেড়ে দেওয়া হল৷ সেটাও পাথরের মতো সোজা নীচে পড়ে গেল৷ এর পরই গ্লেইসার বুঝতে পারেন , ‘বেলুন সিকনেস ’ তাঁকে ক্রমাগত গ্রাস করছে৷ হাত তুলতে গিয়ে দেখলেন কোনও সাড় নেই৷ চিত্কার করে কক্সওয়েলকে ডাকতে গেলেন , কিন্ত্ত মুখের কথা যেন মুখেই জমে গেল৷ মাথাটা হেলে পড়ল এক দিকে৷ চারপাশে শুধু অন্ধকার৷ মনে হয়েছিল , মৃত্যু ছাড়া কোনও গতি নেই৷ বুদ্ধি করে নীচে নামতে শুরু করেছিলেন বলেই সে যাত্রায় প্রাণটা বেঁচেছিল৷ এ ভাবে নিজেদের অজান্তেই প্রায় ৭ মাইল (৩৭ ,০০০ ফুট ) উঠে গিয়েছিলেন গ্লেসিয়ার ও কক্সওয়েল৷ বেলুন সফরের ক্ষেত্রে যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলেই মনে করা হয়৷ নিজেদের সেই অ্যাডভেঞ্চারের অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন গ্লেইসার৷ তাঁর বর্ণনাতেই পাঠকের বেলুন থেকে পৃথিবী ও মহাকাশ দর্শন সম্ভব৷ ৫ সেপ্টেম্বর উলভারহ্যাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্লেইসার ও কক্সওয়েল৷ গ্লেইসারের কথায় বলতে গেলে , ‘সে দিন চারপাশ সূর্যের আলোয় ভেসে যাচ্ছিল৷ নির্মেঘ নীল আকাশ৷ যত উপরে উঠছি নীচে মেঘের সমুদ্র৷ কখনও নীচে পর্বতের সারি , কখনও তুষারাবৃত শৃঙ্গ--- অনবদ্য দৃশ্য৷ ’ পাঁচ মাইল ওঠার পরই তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল৷ আর তখনই শুরু হল একের পর এক সমস্যা৷ গ্লেসিয়ারের বর্ণনায় , ‘থার্মোমিটারের পারদ , ঘড়ির কাঁটা --- কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না৷ কম্পাসের কাঁটা বোঝাও তো দুষ্কর হয়ে পড়ছিল৷ ’ এই অবস্থায় তাঁদের নীচে নামাটাই একমাত্র প্রাণ বাঁচানোর উপায় ছিল৷ কিন্ত্ত যে ভালভ -লাইন খুলে বেলুনকে নীচে নামানো হবে , সেই ভালভ -লাইন তো অন্য দড়িতে আটকানো৷ সেটাকে খোলার জন্য কক্সওয়েলকে বিপজ্জনকভাবে বেলুন বেয়ে উঠতে হবে৷ গত্যন্তর না দেখে কক্সওয়েল বেলুনের দড়ি ধরে নামার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এ দিকে বেলুনে বসে গ্লেইসার তখন প্রায় জ্ঞান হারিয়েছেন৷ কক্সওয়েলও বুঝতে পারছিলেন , নীচের স্নায়ুর উপর ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তিনি৷ জীবন বিপন্ন বুঝেই দাঁত দিয়ে ভালভ -লাইন চেপে ধরে কয়েক বার মাথা ঝাঁকান তিনি৷ আর তাতেই কাজ হয়৷ ধীরে ধীরে নামতে থাকে বেলুনটা৷ জ্ঞান ফিরে পেতেই গ্লেইসার বেলুনের উপর থেকে কক্সওয়েলের গোঙানি শুনতে পান৷ বুঝতে পারেন , কক্সওয়েল জ্ঞান হারাচ্ছেন৷ কোনওক্রমে কক্সওয়েলের পা ধরে তাঁকে বেলুনের ভিতরে নিয়ে আসেন গ্লেইসার৷ ‘ট্রাভেলস ইন দ্য এয়ার ’ বইয়ে এ ভাবেই নিজেদের প্রথম বেলুনযাত্রা বর্ণনা করেছেন গ্লেইসার৷ মাটিতে ফেরা পর্যন্ত একটা পায়রা তাঁদের বেলুনে ছিল৷ কিন্ত্ত এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় সে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল , উড়ে যাওয়ার আগে প্রায় মিনিট পনেরো গ্লেইসারের হাত আঁকড়ে বসেছিল৷ গ্লেইসার ও কক্সওয়েল অবশ্য এর পরও একাধিকবার বেলুন অভিযানে গিয়েছেন৷ আর সেই সব অভিজ্ঞতাও নিজের বইয়ে তুলে ধরেছেন গ্লেইসার৷ ছোট ছোট জলকণা কী করে হঠাত্ মেঘ হয়ে যায় ? কী ভাবে মেঘের পরে মেঘ জমে ? এ সব জানার আগ্রহই গ্লেইসারের বেলুন যাত্রার অন্যতম অনুপ্রেরণা৷ এক বার লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্লেইসার৷ আর সেই যাত্রাতেই লন্ডনের অনবদ্য একরূপ ধরা পড়েছিল তাঁর চোখে৷ ‘ওয়েস্টমিনস্টারের ঘড়িটা দেখে মনে হচ্ছিল যেন নিষ্প্রভ দু’টো চাঁদ৷ আর কমার্শিয়াল রোডটাকে তো উপর থেকে ছায়াপথের মতো দেখাচ্ছিল৷ শস্যভরা খেত দেখে মনে হবে , কে যেন সোনার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছে৷ ’ ‘ব্রিটিশ বেলুন মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি ’র আধিকারিক জন বেকারের কাছে আরও চমকপ্রদ কিছু তথ্য মিলল৷ গ্লেইসারদের বেলুন অবশ্য এখনকার হট এয়ার বেলুনের মতো ছিল না৷ তাঁদের বেলুন হাইড্রোজেনের মতো হাল্কা গ্যাসে ভরা ছিল৷ আর সেই গ্যাস ধূমায়িত বাষ্পের মতোই দ্রুত বেলুনকে উপরপানে টেনে নিয়ে যায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে , বেলুন অভিযানে বেশিদূর পাড়ি দেওয়া সম্ভব না হলেও মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এই বেলুনের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়বে৷ আর সেক্ষেত্রে গ্লেইসার ও কক্সওয়েলের মতো অভিনব অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হতে পারেন কেউ কেউ৷

সুত্র: এই সময়

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/25/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate