জীবদেহেও যে বিদ্যুতের অস্তিত্ব রয়েছে -- এ ব্যাপারটি সর্ব প্রথম যে বিজ্ঞানী প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি হলেন লুইজি গ্যালভানি। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাঁরই আবিষ্কৃত বিশেষ এক ধরনের ব্যাটারির সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন যে জীবদেহে বিদ্যুতের অস্তিত্ব রয়েছে। এ প্রমাণটি করতে গিয়ে তাঁকে মানুষের বিদ্রূপের শিকারও হতে হয়েছিল। তাঁকে অনেকে ব্যাঙ-নাচানো বিজ্ঞানী বলে ডাকতে শুরু করে। বিষয়টি প্রমাণে তিনি প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছিলেন একটি মৃত ব্যাঙের ওপর। মৃত ব্যাঙের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে ব্যাঙটি এক রকম লাফ দিয়ে উঠেছিল। আর এ কারণেই তিনি ব্যাঙ নাচানো বিজ্ঞানীর খেতাব পেয়েছিলেন। বিজ্ঞানী গ্যালভানি জন্মগ্রহণ করেন ১৭৩৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, ইতালির বোলোগনা শহরে। চিকিৎসক বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনিও চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়েই লেখাপড়া করেন। ১৭৬২ সালে লাভ করেন মেডিসিনের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি। তবে গ্যালভানির লিখে রেখে যাওয়া নোট থেকে জানা যায়, তাঁর সব গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কে তথ্য আহরণ। তিনি যখন জীবদেহে বৈদ্যুতিক শক্তির অস্তিত্বের প্রমাণ দেন তখন এক জন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি হলেন অ্যালোসান্দ্রো ভোল্টা। কিছু দিন পর অবশ্য ভোল্টাও হার মানেন গ্যালভানির কাছে। তিনি গ্যালভানির আবিষ্কৃত তত্ত্বের ব্যাপক প্রশংসাও করেছিলেন পরবর্তীকালে। একটি ব্যাঙের নার্ভের দ্বারা অন্য ব্যাঙের নার্ভে আঘাত করে বিদ্যুৎপ্রবাহ ঘটিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে জীবদেহে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য ধাতব আঘাতের কোনও প্রয়োজন নেই। ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন ইতালি দখল করার পর গ্যালভানির গবেষণাকার্যে নানা রকম জটিলতা আসতে থাকে। ফলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরে অবশ্য তিনি আবারও যোগ দিয়েছিলেন কাজে। তবে সহকর্মীদের উৎপাতে বেশি দিন টিকতে পারেননি। আবার চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান গ্যালভানি। সেখানেই ১৭৯৮ সালের ৪ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিজ্ঞানী।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/4/2020