আরও খুঁটিয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে এই মডেলটি ‘বিগ ব্যাং’-এর শুরু থেকে ১০-৪৩ সেকেন্ড অবধি আমাদের কোনও ধারণাই দিতে পারে না দেশকাল ও পদার্থের অবস্থা সম্পর্কে। কেবল বলা যায় যে তরান্বিত গতিতে ‘স্পেস’-এর অতিদ্রুত সম্প্রসারণ চলছিল এবং এই সম্প্রসারণের ফলেই অতি উচ্চ-শক্তির কণা ও প্রতিকণার সৃষ্টি হতে শুরু করে বিশ্ব সৃষ্টির ঐ আদি অবস্থাতে। ১০-৪৩থেকে ১০-৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত শক্তি এতটাই বেশি ছিল যে এই সময়কালটিকে বলা হয় Grand Unification Epoch। কেন এ রকম নাম ? আমরা জানি যে আমাদের বিশ্বে চারটি মৌলিক বল (fundamental force) রয়েছে। অর্থাৎ এই চারটি বলের মাধ্যমে যে কোনও মৌল কণা নিজেদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া (interaction) করতে পারে। ঐ বিশেষ মুহূর্তে অর্থাৎ Grand Unification Epoch-এর সময়, আমাদের বিশ্বের চারটি মৌলিক বলের মধ্যে তিনটি (তড়িৎ-চুম্বকীয় বা electromagnetic, দৃঢ় বা strong এবং মৃদু বা weak) একত্রিত ছিল। তাই এমন নাম। কেবল মহাকর্ষ বলটি এই Grand Unification Epoch–এর শুরুতে বাকি তিনটির থেকে আলাদা হয়ে যায়। মহাবিশ্বের প্রসারণ দ্রুতহারে চলতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তার তাপমাত্রাও কমে আসতে থাকে। ‘বিগ ব্যাং’-এর ১০-৩৬ সেকেন্ড পরে সদ্যোজাত ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ছিলো ১০২৭ কে। এই ভীষণ তাপমাত্রায় দৃঢ় বল, যা খুব ছোট দূরত্বে কাজ করে ও প্রোটন এবং নিউট্রনকে ধরে রাখে, তা অন্য বল দু’টি (যাদের একত্রে electroweak force বলা হয়) থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় সিমেট্রি ব্রেকিং (symmetry breaking)।
এর ঠিক পরেই ঘটে এক অতি দ্রুত সম্প্রসারণ বা স্ফীতি। যাকে পদার্থবিদরা বলেন inflation। এই বিশেষ মুহূর্তে আমাদের বিশ্বের আয়তন এক লাফে প্রায় ১০৫০ বেড়ে যায় কেবল ১০-৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে। অর্থাৎ বলা যায় চোখের নিমেষে এই বিরাট পরিবর্তন। এই inflation–এর পর আমাদের বিশ্বের সম্প্রসারণ একটু ধীর গতিতে চলতে থাকে এবং তা এখনও চলছে। এর পরবর্তী পর্যায় থেকে মহাবিশ্বের ইতিহাস আরেকটু ভালো করে জানা সম্ভব। মোটামুটি ভাবে ‘বিগ ব্যাং’-এর ১০-১২ সেকেন্ড পর থেকে মনে করা হয় যে আমাদের বিশ্বের চারটি মৌলিক বলের আলাদা অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা তখনও এতটাই বেশি যে পদার্থের মৌলিক কণা ‘কোয়ার্ক’গুলি একত্রে এসে প্রোটন কিংবা নিউট্রন গঠন করার মতো অবস্থায় ছিল না।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/12/2019
পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞানে অনেকেরই আগ...