‘‘বিশ্বব্রহ্মান্ডের আসল চেহারা কী জানবার জো নেই। বিশ্বপদার্থের নিতান্ত অল্পই আমাদের চোখে পড়ে। তা ছাড়া আমাদের চোখ কান স্পর্শেন্দ্রিয়ের নিজের বিশেষত্ব আছে। তাই বিশ্বের পদার্থগুলি বিশেষ ভাবে বিশেষ রূপে আমাদের কাছে দেখা দেয়। ঢেউ লাগে চোখে, দেখি আলো। আরো সূক্ষ বা আরো স্থূল ঢেউ সম্বন্ধে আমরা কানা। দেখাটা নিতান্ত অল্প, না-দেখাটাই অত্যন্ত বেশি।’’
—বিশ্বপরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
খুব সহজবোধ্য ভাষায় আমাদের এই বিশ্বজগৎ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যে কথাগুলি লিখেছিলেন, সেগুলি আজও সত্যি। পার্থক্য শুধু এইখানে যে, যখন তিনি বিশ্বপরিচয় লিখেছেন, সেই সময়ের চেয়ে বর্তমান মানুষ আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরেকটু বেশি জানতে পেরেছে। নিজের ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বিশ্বজগতের উৎপত্তি, তার আয়তন, মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা অসংখ্য মহাজাগতিক ঘটনা ‘দেখার’ ও বোঝার তাগিদে নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তবুও, আজও দেখার চেয়ে ‘না-দেখাটাই’ বেশি। কিন্তু বিজ্ঞান এই ভাবেই এগোয়। প্রচলিত ধারণার মূলে আঘাত করে দেখতে চায় তার যৌক্তিকতা, না-দেখা, না-জানা বিশ্বের খবর পাওয়ার জন্য চালায় পরীক্ষা নিরীক্ষা। আর এই অদেখাকে দেখার, অচেনাকে চেনার অদম্য ইচ্ছে মানুষকে যে কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় তা হলো “আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের উৎপত্তি কী ভাবে ?” পদার্থবিদ্যার যে শাখা এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে তাকে আমরা বলি সৃষ্টিতত্ত্ব বা কসমোলজি (Cosmology)। আর এই সৃষ্টিতত্ত্বের যে মডেলটি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল তাকে আমরা চিনি ‘বিগ ব্যাং’ (Big Bang) নামে।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের এই মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটি অসীম ঘনত্ব ও চরম তাপমাত্রার বিন্দু ‘সিংগুলারিটি’ (singularity) থেকে। শুরুর এই সঠিক ক্ষণটিকে পদার্থবিদ্যার ভাষায় singularity বলা হয়, যার সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ ঐ অসীম ঘনত্ব ও তাপমাত্রায় পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলি আর কাজ করে না, তখন সব বে-নিয়মের রাজত্ব, বা বলা ভাল সঠিক ঐ শুরুর মুহূর্তটি সম্পর্কে আমরা আজও অন্ধকারে। যেটা বলা সম্ভব তা হল ঐ চরম অবস্থা থেকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ইতিবৃত্ত। তাই আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ঠিক বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টির গল্প নয়, বরং এর বিবর্তনের ইতিহাস।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020