অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

গিরগিটি কী ভাবে রং বদলায়

গিরগিটি কী ভাবে রং বদলায়

রোববারের বিকেল টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আমরা নেতাজি তরুণ সঙ্ঘের চার জন মানে পটলা, ফুচকা, বাবলু আর আমি পিন্টু, দুপুর থেকে ক্যারাম পিটে  চলেছি। ও দিকে ক্লাবের টিভিটা সেই তখন থেকে চলছে। যে চ্যানেলেই দাওনা কেন খালি ফুটবলের খবরই দেখাচ্ছে, অবশ্য আমাদেরও কোনও আপত্তি নেই! আজ আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির খেলা আর উত্তেজনায় সবাই ফুটছি। জ্ঞান জেঠু মাঝখানে বলেছিলেন, “ওরে তোরা  টিভিটাকে একটু রেস্ট দে, আজ রাতের  খেলাটা  তো দেখতে হবে নাকি ?” এই কথা বলে জ্যেঠুও  মুখ গুঁজেছেন খবরের কাগজের দুই টিমের খেলার পরিসংখ্যানে, হিসেব করে দেখছেন কোন টিম কতটা ভারী, কার জেতার সম্ভাবনা বেশি আর এ সব ব্যাপারে জ্ঞান জেঠু সত্যিই পারদর্শী। বিশ্বকাপ শুরুর সময়তেই পাড়ার নন্টুদাকে বলেছিলেন, “নন্টু, যাকেই সাপোর্ট করো না কেন আর্জেন্টিনা আর জার্মানি-ই ফাইনাল খেলবে।” নন্টুদা অবশ্য তাতে কান দেয়নি আর তার ফল হাতে হাতেই পেয়েছে। শুরু হয়েছিল স্পেন দিয়ে, তার পর ইতালি, ফ্রান্স , ব্রাজিল থেকে নেদারল্যান্ড অবধি যাকেই সাপোর্ট করেছে সবাই একে একে হেরেছে। ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচের রাতে ফুচকা দারুণ রেগে গেছিল নন্টুদার ওপর, অপয়া বলে গালও দিয়েছিল কিন্তু নন্টুদা গায়ে মাখেনি, পরের রাতেই কোথা থেকে একটা নেদারল্যান্ডের জার্সি কিনে পরে এসেছিল, ব্যাস অমনি যা ঘটার তাই ঘটল। আজ আমরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আছি আর ভয়েও আছি নন্টুদা কার উপর কুদৃষ্টি দেয়। কিছুক্ষণ হল  দি সিদ্ধেশ্বর টি-স্টল  থেকে মুড়ি, বেগুনি, কাঁচালঙ্কার সাথে গরম-গরম  চা এসে গেছে। গরম বেগুনিতে কামড় দিয়ে  জ্ঞানজ্যেঠু বলে উঠলেন, “হ্যাঁরে, নন্টুকে তো দেখছি না, ব্যাটা গেল কোথায়?” পটলা বলল, “নিশ্চই জার্সি কিনতে গেছে, আজ আবার কাকে হারাবে কে জানে? ও যা গিরগিটির মত রং বদলায়, হুঁ”, বলে আপন মনে গজরাতে লাগল। জ্ঞানজ্যেঠু বললেন, “পটলা, সায়েন্স নিয়ে পড়ছিস, আবার নন্টুকে গিরগিটিও বললি। আচ্ছা জানিস কি গিরগিটি কী ভাবে রং বদলায়?” পটলা বলল, “সেটা জানি না তবে camouflage মানে ছদ্মবেশ ধরতে রং বদলায় যাতে শত্রুরা দেখতে না পায়।” জেঠু খ্যাক-খ্যাক করে হেসে বললেন, “পটলা, ফেল মারলি, কী ভাবে রং বদলায় জিজ্ঞাসা করেছি, কেন নয়।” আমরা বুঝলাম জ্যেঠু এখন জ্ঞান বিতরণ করবেন আর খিদেও বেশ পেয়ে গেছে তাই সবাই মিলে মুড়ি বেগুনি খেতে-খেতে  জ্যেঠুকে কে ঘিরে বসলাম। জেঠু বলে চললেন, “প্রাণী জগতে শুধু গিরগিটিই  রং বদলায় না, অনেক পোকামাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপ, মাছ মায় অক্টোপাসও রং বদলাতে পারে। তাদের রং বদলানোর পদ্ধতি এবং কারণের রকমফের আছে, কিন্তু বিস্তারিত এখনও অজানা। তবে গিরগিটি শুধু camouflage করতেই রং বদলায় না, নিজেদের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান করতে, অন্য গিরগিটিকে ভয় দেখাতে এমনকী প্রজননের জন্য পুরুষ সঙ্গীকে ইমপ্রেস করতেও রং বদলায়।” আমরা সকলে হেসে উঠলাম। জ্যেঠু বলে চললেন, ” গিরগিটি কখন রং বদলায় তা জানার আগে বরং আমরা জেনে নিই ওরা কী ভাবে রং বদলায়। তার আগে পটলা তুই উত্তর দে, ectotherm কাদের বলে ?” পটলা উত্তর দিল, “ওই তো যে সব প্রাণীর রক্ত খুব ঠান্ডা, দেহের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বাইরে থেকে তাপ নেয়।” জেঠু একটু মুচকে হাসলেন, “হ্যাঁ, গিরগিটিও ওই ectotherm-দের দলেই পড়ে। ধর যখন খুব ঠান্ডা তখন দেহের মধ্যে যাতে বেশি তাপ শোষণ হয় তার জন্য বেশ dark হয়ে যায় আবার যখন বেশ গরম তখন light colured  হয়ে যায় যাতে তাপ প্রতিফলিত করে  দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পারে। বাইরের তাপমাত্রা, আলো অনুভব করে এরা নিজেদের রং বদলায়। এমনও দেখা গেছে রাতের বেলায় বেশ গাঢ় রঙের হয়ে ঘুমোচ্ছে, এমন সময় শরীরের কোনও অংশে টর্চের আলো ফেললে সেই অংশের রং আস্তে-আস্তে হালকা হয়ে যায়। এদের যে চামড়া বা ত্বক তাতে তিনটে স্তর থাকে আর প্রত্যেক স্তরে এক-এক রকমের chromatophore  বা রঞ্জকগ্রন্থি  থাকে। সব চেয়ে বাইরের যে স্তর তাতে থাকে xanthophore, যেগুলো লাল আর হলুদ রঙের জন্য দায়ী। মাঝেরটায় থাকে iridophore যেগুলো নীল রঙের জন্য দায়ী, এই iridophore-কে আবার guanophores-ও বলে, কারণ ওই গ্রন্থীগুলোতে বর্ণহীন guanine crystal থাকে, আর এগুলোর মধ্যেই আলো প্রতিফলিত এবং বিচ্ছুরিত হয়ে নীল দেখায়। সব চেয়ে ভিতরের তিন-নম্বর স্তরটায় থাকে কালো রঙের রঞ্জক পদার্থ নিঃসরণকারী গ্রন্থী melanosome তাই ওটার নাম melanophore, আর এগুলোই রং বদলানোর জন্য মূল ভূমিকা নেয়। এখন mechanism-টা বুঝতে হলে তোদের একটা ছবি এঁকে দেখানোই ভালো।” এই বলে জেঠু হাতটা মুছে নিয়ে ক্লাবের কালো বোর্ডটার কাছে গিয়ে আঁকতে শুরু করলেন।

জেঠু বললেন, “লক্ষ করে দেখ melanophores গুলো অনেকটা তারার মতো আকৃতি, আর তারার বিস্তারটা সবগুলো স্তরে ছড়িয়ে রয়েছে, আর এর ভেতরেই রয়েছে melanosomes-গুলো। Melanosomes-গুলো যখন ছড়িয়ে  পড়ে  তখন চামড়াটা  dark দেখায় আর তারার কেন্দ্রে থাকলে চামড়াটা light হয়ে যায়। এখন এই  melanosomes- এর বিস্তার বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থকে ঢেকে দেওয়ার তারতম্য অনুযাযী ত্বকের রং পাল্টে যায়। তোরা অনেকেই জল রং করেছিস, মনে করে দেখ কালো, লাল আর হলুদ রং বিভিন্ন ভাবে মিশিয়ে কতগুলো রং পাওয়া যায়। তাই বলে গিরগিটিদের আবার জার্মান বলে ভাবিসনি আর কখনও ভাবিসনি এই রঞ্জক পদার্থগুলো একেবারে মিশে যায়। এগুলো খুব ছোট ছোট থলির মধ্যে ভরা থাকে আর ত্বকের বিভিন্ন স্তর সঙ্কুচিত-প্রসারিত হয়ে ত্বকের বিভিন্ন অংশে রঞ্জক পদার্থের ঘনত্ব পাল্টে-পাল্টে আলাদা আলাদা রং দেখায়। নীল আর সাদা রঙ তো iridophores-এ থাকা guanine crystal গুলোয় scattering বা reflection-এর জন্য হয় তা তো আগেই  বলেছি। অতএব রঙের সমস্যা কতকটা মিটল। কিন্তু কথা হচ্ছে  গিরগিটি কী দেখে এই রং পাল্টায় ? এদের চামড়ায় কিছু receptors থাকে যারা বাইরের তাপমাত্রা অনুভব করে এমন কিছু neuronal বা hormonal  signal central  nervous system-কে পাঠায়, সেখান থেকে রং পরিবর্তনের  সংকেত আসে, যার বহিঃপ্রকাশ এই রং পরিবর্তন।”

জেঠু এ বার একটু দম নিলেন। ফুচকা বলে উঠল, “এটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ওই যে বলেছিলেন অন্য গিরগিটিকে ভয় দেখাতে ওরা রং পাল্টায়, সেটা কী ভাবে হয় ?” জেঠু কিছুটা হাসলেন, তার পর আবার বলতে শুরু করলেন, “কি জানিস তো গিরগিটিরা দুম করে বাঙালিদের মতো মারামারি করে শক্তির অপচয় করতে চায় না। বাঙালিরা যেমন হাত থাকতে মুখে কেন নীতি অনুসরণ করে তেমনি গিরগিটিরা ঠিক উল্টো, মুখ থাকতে হাতে কেন ? ধর কোনও এক জন অন্য জনের এলাকায় ঢুকে পড়েছে তখন এরা অযথা আগেই মারপিট করতে শুরু করে না। পরস্পর একে অন্যকে নিজেদের রং পাল্টে সতর্ক করে বোঝাতে চায় ‘তুম ভি মিলিটারি তো হাম ভি মিলিটারি’!। যার রংবাজি ভালো হয় তার কাছে আর অন্য জন ঘেঁষে না, চুপ-চাপ কেটে পড়ে। এ ছাড়াও কোনও  মহিলা  গিরগিটি যদি পুরুষ গিরগিটির সাক্ষাৎ পায় তখন নিজের প্রতি আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য নিজেকে রঙিন করে তোলে, যাতে তার রঙচঙে ভাবে তার জীবনে রং আসে।

এ ছাড়াও camouflage-র ব্যাপারটাও আছে। কিন্তু সেটা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। দু’ জন বিজ্ঞানী গবেষণা করে আদৌ এর সত্যতা খুঁজে পাননি। আর একটা ব্যাপার, এরা খুব লাজুক স্বভাবের, তাই এদের দেখতে গেলেই গাছের আড়ালে, ঝোপে-ঝাড়ে লুকিয়ে পড়ে। আলোর থেকে লুকিয়ে অন্ধকারে গেলেই রং যায় পাল্টে। আমি নিশ্চিত তোরা যদি এই রং পরিবর্তন চাক্ষুস দেখিস তা হলে নিশ্চয়ই খুব আনন্দ পাবি”, জ্ঞান জেঠু থামলেন। হঠাৎই একটা শব্দ শুনে দরজার দিকে তাকালাম, দেখলাম নন্টুদা একটা নীল-সাদা জামা পরে এসেছে! আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো, নন্টুদা ঠিক কাকে সাপোর্ট করছে আর্জেন্টিনা না অন্য কাউকে ?!!

ছবি: দেবমাল্য ঘড়াই, আইআইটি, খড়গপুর

সূত্র: কুণাল চক্রবর্তী, ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিকাল সায়েন্সেস, বেঙ্গালুরু, bigyan.org.in

সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/26/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate