গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য। জন্ম ১৮৯৫ সালের ১ আগস্ট, অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। আধুনিক ভারতের তিনিই সম্ভবত প্রথম কীট সমাজবিদ্যার (insect ethology) পথিকৃৎ। ভারত তো বললাম কিন্তু ঠিক কত জন মানুষ তাঁর নাম শুনেছেন? ১৯৩৬ সালে তাঁর মেছো মাকড়সার ওপর কাজটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’-এর মুখপত্রে এবং ১৯৫১ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য স্টাডি অফ সোশ্যাল ইনসেক্টস-এর সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে। তাঁর অনেক কাজের মধ্যে পিঁপড়ের লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা এবং তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে অন্যতম।
গোপালচন্দ্রের কাজের ব্যাপ্তি তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায়। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা না থাকার দরুণ বঞ্চিত হয়েছেন যথোচিত সম্মান থেকে, সেক্ষেত্রে একমাত্র সান্ত্বনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডিএসসি ডিগ্রিটি। যদিও জগদীশচন্দ্র তাঁকে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তবুও তিনি নিজেই কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোপালচন্দ্রের বিজ্ঞান বিকাশে।
গোপালচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র। সেই সময় জগদীশচন্দ্র যদি গোপালচন্দ্রকে উচ্চতম বিজ্ঞান শিক্ষার অনুমতি দিতেন তা হলে গোপালচন্দ্র অনেক আগেই ভারতকে বিশ্বের জীববিদ্যার মানচিত্রে যোগ্য অধিকার এনে দিতে পারতেন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য়ের রচনার অবদান যেমন অনস্বীকার্য ঠিক তেমনি তাঁর লেখাগুলো বহু মানুষের মনের গভীরে পপুলার সায়েন্সের আগ্রহের বীজ ছড়িয়ে দেয়। বাংলা মাধ্যমে লিখে বিজ্ঞানকে যাঁরা জনপ্রিয় করেছেন তাঁদের নাম স্মরণ করতে গেলেই যে নামটা প্রথমেই মনে আসে তিনি হলেন গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য। গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, বাংলায় পপুলার সায়েন্সের শুধু প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্বই নন তিনি হলেন অন্যতম। তাঁর লেখা না পড়ে, না বুঝে, না জেনে, বাংলায় বিজ্ঞান প্রচার আসলে বর্ণমালা না শিখে মহাভারত পাঠের চেষ্টার মতোই হাস্যকর। ১৯৮১ সালের ৮ এপ্রিল এই বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।
সূত্র: bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/23/2020