পদ্মভূষণ আচার্য কারিয়ামানিক্যম শ্রীনিবাস কৃষ্ণণ (কে এস কৃষ্ণণ নামেই বেশি পরিচিত), ফেলো অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি এক জন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী।
ক্রিশ্চিয়ান কলেজে চাকরি করার সময় বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ নিয়মিত পড়তেন কৃষ্ণণ। সেখানে প্রফেসর রমনের গবেষণাপত্রগুলো পড়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেললেন। রমনের জ্ঞানের গভীরতা ও পড়ানোর স্টাইলে মুগ্ধ শিক্ষার্থীদের অনেকেই রমনের রিসার্চ গ্রুপে গবেষণা করার জন্য উদগ্রীব। প্রফেসর রমনের কাছ থেকে পদার্থবিজ্ঞান শিখবেন ভেবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় চলে এলেন ১৯২০ সালে। ১৯২১ সালে ইউরোপ ভ্রমণ-কালে রমন আলোর বিচ্ছুরণ সংক্রান্ত যে সব পর্যবেক্ষণ করেছেন সেগুলোকে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করেছেন। ১৯২৩ সালের নভেম্বর মাসে রমনের গ্রুপে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগ দিলেন কে এস কৃষ্ণণ। পরবর্তী এক বছর ধরে কৃষ্ণণ পরীক্ষা করলেন ৬৫টি তরলের বিচ্ছুরণ ধর্ম। ১৯২৫ সালে ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হল কৃষ্ণণের প্রথম গবেষণাপত্র ‘অন দ্য মলিকিউলার স্ক্যাটারিং অব লাইট ইন লিকুইড্স’। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হল কৃষ্ণণের দ্বিতীয় গবেষণাপত্র । ১৯২৬ সালে স্যার রমনের সঙ্গে আরও তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় কৃষ্ণণের। ১৯২৭ সালে কৃষ্ণণ নয়টি গবেষণা-পত্র প্রকাশ করেন যাদের মধ্যে আটটির সহ-লেখক হিসেবে রমনের নাম আছে। সবগুলো পেপারই তরলের ভৌত-ধর্ম সংক্রান্ত। এই পেপারগুলো রমনের নোবেল বিজয়ী গবেষণার দিক-নির্দেশক। ১৯২৭ সালের শেষে আর্থার কম্পটনকে ‘কম্পটন এফেক্ট’ আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলে কৃষ্ণণ ও রমনের মনে হল এক্সরে’র ক্ষেত্রে কম্পটন এফেক্ট যে রকম সত্য, সে রকম ঘটনা আলোর ক্ষেত্রেও সত্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রমন সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাপারটা দ্রুত পরীক্ষা করে দেখবেন। ১৯২৮ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হল পরীক্ষণের কাজ। রমন কৃষ্ণণের ওপর ভার দিলেন এ গবেষণার পরীক্ষাগুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কৃষ্ণণ তখন এ সংক্রান্ত তত্ত্বীয় গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। ১৯২৩ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত স্যার সি ভি রমনের সঙ্গে গবেষণা করে রমন এফেক্ট আবিষ্কারের পর ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিয়ে কৃস্টাল ম্যাগনেটিজম বিষয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেন।
১৯৩০ সালে রমন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পৃথিবীবিখ্যাত হয়ে ওঠেন। নোবেল বক্তৃতায় রমন স্বীকার করেছেন কৃষ্ণণের অবদানের কথা। ১৯৩২ সালে অন্ধ্র ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসরের পদে কৃষ্ণণকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে চিঠি লিখেছিলেন রামন। সেখানে তিনি লিখেছেন “১৯২১ সাল থেকে শুরু করে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি না করে শুধুমাত্র ১৯২৮ সালের কাজের ওপর ভিত্তি করে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলে কৃষ্ণণও নোবেল পুরস্কারের অংশীদার হতেন”।
১৯৪০ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ পান অধ্যাপক কৃষ্ণণ। ১৯৪৬ সালে কৃষ্ণণকে নাইটহুড প্রদান করে ‘স্যার’ উপাধি দেয় ব্রিটিশ সরকার।
এক্স-রে কৃস্টালোগ্রাফির জন্য ১৯১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ব্র্যাগ কৃষ্ণণকে আমন্ত্রণ জানান লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউটে। ১৯৩৭ সালে বেলজিয়ামের লিজ ইউনিভার্সিটি মেডেল প্রদান করে কৃষ্ণণকে। ১৯৪১ সালে কৃষ্ণ রাজেন্দ্র জুবিলি গোল্ড মেডেল পান প্রফেসর কৃষ্ণণ। জাতীয় পর্যায়ে ১৯৫৪ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে সম্মানিত হন স্যার কৃষ্ণণ। ১৯৬১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কার ভাটনগর পুরস্কার পান। ১৯৬১ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিয়ে সম্মানিত করা হয় স্যার কৃষ্ণণকে।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020