অধুনা পাকিস্তানের অন্তর্গত পঞ্জাবের ছোট্ট গ্রাম রায়পুর। বাসিন্দা মোটে ১০০ ঘর। কোনও বাড়িরই অবস্থা তেমন স্বচ্ছল নয়। সেই গ্রামেরই কৃষি-ট্যাক্স আদায়কারী এক করনিক কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাঁর সন্তানদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে। সেই প্রতিজ্ঞা বিফলে যায়নি। বিশ্বের দরবারে এক দিন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল এই বড়িরই ছেলে। তিনি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হরগোবিন্দ খুরানা।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানীর শৈশব ছিল দারিদ্র্যপূর্ণ। কিন্তু তা তিনি অতিক্রম করেছিলেন তাঁর জেদ এবং অধ্যবসায় দিয়ে।
মুলতানের স্কুলে লেখাপড়ার প্রথম পাঠ শুরু খুরানার. সেখান থেকে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। রসায়নে স্নাতক হওয়ার পর জৈব-রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ৪৫-এ। ভারত সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে যান লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪৮ সালে সেখান থেকেই পিএইচডি করেন। পরে পোস্ট ডক-এর জন্য যান সুইত্জারল্যান্ডের ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে। ৬০-এ প্রথম যান আমেরিকায়. উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে. সেখানে তিনি ইন্সটিটিউট অফ এনজাইম রিসার্চ-এর ডিরেক্টর হন। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর প্রোটিন নিয়ে কাজ শুরু। পরে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৬৮ সালে জেনেটিক কোডের সাহায্যে আরএনএ থেকে কী ভাবে প্রোটিন তৈরি হয় তা আবিষ্কারের জন্য আরও দুই বিজ্ঞানীর সঙ্গে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পান। তাঁরা ছিলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট হোলি এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ-এর মার্শাল নিরেনবার্গ। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র জীববিজ্ঞান ও রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। গবেষণা, অধ্যপনার ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ছাত্র এবং যুবসমাজের শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত ছিলেন। এমআইটি থেকে ২০০৭-এ অবসর নেওয়ার পরও, যখনই তাঁর কাছে ছাত্ররা এসেছে গবেষণার কাজ নিয়ে তিনি সব সময় তাদের সাহায্য করেছেন।
এমআইটি তে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী অধ্যাপক রাজ ভাণ্ডারী বলেছিলেন, “যে জায়গা থেকে উঠে এসে তিনি জীবনে সফল্যের যে শীর্ষে পৌঁছেছিলেন, তা সকলের কাছেই প্রেরণার উৎস।”
২০১১ সালের ১০ নভেম্বর ৮৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/18/2020