এই আপাত অদ্ভুত উত্সবটি প্রতি বারো বছরে এক বার অনুষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র ওঁরাও রমণীরাই এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। ওই দিন ওঁরাও মহিলারা পুরুষদের মতো পোশাক পরে তির, ধনুক, টাঙ্গি, বল্লম, লাঠিসোটা নিয়ে সারা দিন ধরে গ্রাম থেকে গ্রামে গিয়ে শিকার করেন এবং শিকার করা পশুদেহ ঘরে নিয়ে আসেন। যদি কারও পোষা গরু বাছুরও মারা হয়, তা হলেও অভিযোগ করা হয় না। কথিত আছে, এক বার সারহুল পরবের সময় আফগানরা রোহতাস গড় দুর্গ ও তার সংলগ্ন আদিবাসী গ্রামে হামলা করে। সমর্থ পুরুষেরা সেই সময়ে একেবারে বদ্ধ মাতাল অবস্থায় থাকায় মেয়েরাই পুরুষের সাজে অস্ত্র হাতে আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সেই ঘটনার স্মরণেই এই উত্সব। ওঁরাও মহিলাদের সংগ্রামী চরিত্র ও বিদ্রোহের ইতিহাসের প্রতীক এই উৎসব।
কোরাপুট অঞ্চলের বোন্দা উপজাতির প্রধান উত্সব সুমে-গেলিরাক দশ দিন ধরে পালিত হয়। ‘সিসা’ বা প্রধান পুরোহিত বিভিন্ন আচারের মাধ্যমে দেবতা অপদেবতার পূজা করেন। দেবতাদের প্রতি পশু, পাখি ও পানীয় উত্সর্গ করা হয়। নাচ-গান তো থাকেই আর এই নাচের আসরেই যুবক যুবতীরা জীবনসাথী নির্বাচন করেন। কিন্তু উত্সবের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথাটি বেশ অদ্ভুত — প্রথমে গ্রামের সমস্ত বাচ্চা ছেলে জোড়ায় জোড়ায় মুখোমুখি দাঁড়ায়। তাদের হাতে থাকে গাছের পাতা শূন্য সরু ডাল। উন্মত্তের মতো ড্রাম বাজানো শুরু হতেই তারা পরস্পরকে যত জোরে সম্ভব মারতে থাকে। যথেষ্ট হলে তার পর পরস্পরকে অভিবাদন জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। পরের সন্ধ্যায় একই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে যুবক মাঝবয়সী এবং প্রৌঢ় পুরুষেরা। এ বার উভয় পক্ষের শরীর থেক রক্ত ঝরতে শুরু করলে ‘সিসা’ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বোন্দা উপজাতিদের বিদ্রোহী ও সংগ্রামী চেতনার প্রকাশ এই উৎসব। এই সংগ্রামী চরিত্রই তাদের যুগে যুগে তারা অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সাহায্য করেছে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/28/2019