টুসু পরব বা মকর পরবকে মানভূম অঞ্চলের জাতীয় উত্সব বলা চলে। গোটা পৌষ মাস জুড়েই টুসু উত্সব চলতে থাকে। মূল অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় পৌষ মাসের শেষ দিনে বা মকর সংক্রান্তির দিনে। টুসু উৎসবের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের উৎসবের মিলও লক্ষণীয়। টুসু মহিলাদের উত্সবের সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর পূজার খানিকটা মিল আছে। মকর পরবের মূল আকর্ষণ টুসু গান। টুসু সাজানো, টুসুর ভাসানের শোভাযাত্রা সব কিছুর সঙ্গেই রয়েছে টুসু গান। টুসু উত্সব মিলনের উত্সব, মানুষের চিরন্তন আশা আকাঙ্ক্ষা, হাসি কান্না টুসু গানের মধ্যে প্রকাশিত হয়। মানভূমে ভাষা আন্দোলনের সময়ও মানুষকে সচেতন করতে টুসু গান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, বীরহোর, খেরিয়া, ভূমিজ, হো, ওরাঁও প্রভৃতি উপজাতি আদিবাসী গোষ্ঠীর অত্যন্ত জনপ্রিয় উত্সব ‘করম’ উত্সব। ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীতে ‘করম’ দেবতার পূজা উপলক্ষে মূলত শস্যকেন্দ্রিক এই উত্সব পালিত হয়। জঙ্গল থেকে ‘করম’ দেবতার পূজার উপাচার কাঠ, ফুল, ফল সংগ্রহ করা হয়। গোটা উত্সবের সময় জুড়ে ধামসা, মাদলের সঙ্গে নাচ গান আর আকণ্ঠ হাড়িয়া পান চলে।
আদিবাসী জীবনে শিকার করার অন্যরকম গুরুত্ব আছে। শিকার করা নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে শিকার উত্সব পালন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অযোধ্যা পাহাড়ের শিকার উত্সব বা শিকার মেলা। প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমার রাত্রে এই উত্সব পালিত হয়। এই মেলাতে ছেলেরা সাবালকত্ব প্রাপ্ত হয় — তাই মেলাকে ‘দিসুম সেন্দ্রা-র মেলা’ বা যৌবন মেলাও বলা হয়। এই মেলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। শিকার অভিযান শুরু করার আগে পাহাড়ের ‘সীতা চাটান’-এ বনদেবীকে তুষ্ট করতে মোরগ বলি দেওয়া হয়। সাঁওতাল সমাজের রীতি হল প্রত্যেক পুরুষকে কমপক্ষে এক বার এই শিকার উত্সবে যোগদান করতেই হয়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020