কার্তিক মাসের অমাবস্যাকে ঘিরে পাঁচ দিন ধরে পালিত হয় বাঁদনা পরব বা সহরায় উত্সব। কৃষিনির্ভর আদিবাসীদের কাছে গরু, মোষ, গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব অপরিসীম। বাঁদনা পরব এদের উদ্দেশেই নিবেদিত। দশেরা বা বিজয়া দশমীর পর থেকে বাঁদনা পরবের প্রস্তুতি শুরু হয়। বাঁদনা পরব-এর গান ‘ওহিরা’ গাওয়া হতে থাকে। ঘরবাড়ি, গোয়ালঘর সাজানো হয়। অমাবস্যার রাতেই গোরু ও কাড়ার (মোষ)-এর সিং–এ তেল দেওয়া হয়। হয় গাই জাগানোর গান, চলে ধাঁগোড় নাচ। দ্বিতীয় দিন হয় গোয়াল পূজা বা ‘গয়রা’, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন যথাক্রমে ‘বাঁদনা’ ও ‘বুড়ি বাঁদনা’ আর পঞ্চম দিন ‘কাঁটা কাড়া’। এর মধ্যে গরুকে স্নান করিয়ে নানা রঙে অলঙ্কৃত করা হয়, সিং–এ সিঁদুর দেওয়া হয়, যথাসাধ্য ভালোমন্দ খাওয়ানো হয়। গরু আর মোষের সামনে একটি চামড়া দিয়ে তাদের খেলানো হয়। এই পাঁচ দিন হাল-মই-জোয়াল সব থাকে তুলসিতলায় — কোনও কাজ করা হয় না। শুধু ধামসা মাদল নিয়ে সহরায় গান, নাচ আর হাঁড়িয়া। গ্রামে গ্রামে চাষের কাজে সারা বছর ব্যস্ত থাকলেও বাঁদনা পরবের দিনগুলি আদিবাসীদের সম্পূর্ণ বিশ্রাম থাকে। রাতে গরু ঘুমাবে, মানুষ জেগে থাকবে। কেউ যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন সেই জন্য ধামসা মাদল বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি জাগরণ করেন আমুদে গ্রামবাসীরা। এদের ধাঙ্গুয়াল বলে। অমাবস্যার রাতে গো-জাগানোর কাজও করে এরা। গৃহস্থেরা এদের পিঠে পুলি দিয়ে খুশি করেন।
গ্রীষ্মের প্রাক্কালে চৈত্র সংক্রান্তির দিন পালিত হয় ভাগতা পরব। এই উত্সব ‘বুড়া বাবা’ বা শিবের উত্সব। এক অর্থে ‘ভাগতা পরব’ চড়কের সমগোত্রীয়, সমধর্মী। এই দিন উপবাস পালন করা হয়। পাহান বা লায়া অর্থাৎ পুরোহিত পুকুরে স্নান করতে নামার পর তাঁকে পুকুর থেকে তুলে সরনা মন্দিরে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই পূজা সম্পন্ন হয়। সন্ধেবেলা বীররসে টইটম্বুর ‘ছৌ’ নাচের আয়োজন করা হয়। পর দিন চড়ক গাছের মতোই উঁচু শাল খুঁটিতে নিজেদের বেঁধে, গায়ের চামড়ায় বঁড়শির মতো হুক বিঁধিয়ে উত্সাহী আদিবাসী যুবকেরা রোমহর্ষক কসরত প্রদর্শন করেন।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020