ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বাদ দিয়েও বেশ কিছু উৎসব পালিত হয়। এই সব উৎসবের চালু নাম হল ‘ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব’। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, কবি সাহিত্যিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মজয়ন্তী, বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠান, শহর বা অঞ্চলের নামে উৎসব, পয়লা বৈশাখ — এই ধরনের সব উৎসবই এই ‘ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব’-এর তালিকাভুক্ত হবে। সব ধর্মের, জাতির, সম্প্রদায়ের মানুষই এই ধরনের উৎসবে যোগদান করে থাকেন।
এছাড়াও এই তালিকায় যুক্ত করা যাতে পারে আরও কিছু ধর্মীয় অনুষঙ্গ মুক্ত সাংস্কৃতিক উৎসবকে। এর মধ্যে প্রথম স্থানেই থাকবে বই মেলা। এই উৎসবটি বয়সে নবীন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১০-১৫ দিন ধরে চলে এই মেলা। অন্যান্য সকল মেলার মত শীতেই বসে এই মেলাগুলি। কলকাতা পুস্তক মেলা এগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কুলীন। কয়েকশো প্রকাশক ও লক্ষ লক্ষ পাঠকের মিলনস্থল হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যতম প্রধান ভূমিকায় থাকেন সাহিত্যিকরা। চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, আলোচনা সভাও। শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং কলকাতার নানা এলাকাতেও আঞ্চলিক বইমেলার আসর বসে।
এছাড়াও ধর্ম নিরপেক্ষ উৎসবগুলির মধ্যে রয়েছে নানা আকারের ও গুরুত্বের নাট্য উৎসবগুলি এবং অবশ্যই চলচ্চিত্র উৎসব। ভারতবর্ষের আনাচে কানাচে এত উৎসব উদযাপিত হয় যে তার সর্বাঙ্গীন পঞ্জিকরণ এক দুরূহ কাজ। এই সব উৎসবের মধ্যে কিছু কিছু উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয় বা পরিচিত; আবার বেশ কিছু আসাধারণ উৎসব প্রচারের বাইরে নিভৃতে আনন্দের আলো ছড়িয়ে চলেছে। তবু এরই মধ্যে ভারতের নিজস্ব উৎসব গুলি বিশেষ করে আদিবাসী উৎসবগুলি ক্রমাগত আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন কারণে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। ‘আরণ্যক’-এর ‘দবরু পান্না’র জগত অনেক দিনই তিরোহিত; আর যে ভাবে অরণ্যের সন্তানদের প্রিয় অরণ্যকে ক্রমশ নিকেশ করা হচ্ছে সেখানে সে দিনের বুনো মহিষের দেবতা ‘টাঁড় বারো’ আজও অসহায় — এ বড় পরিতাপের বিষয়।
সূত্র : ভারতের উৎসব : এক নজরে, সুদীপ দত্ত, ভ্রমণ আড্ডা, ৯ম বার্ষিক সংকলন
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019