ভারতের আদিবাসী মাত্রেই উত্সবপ্রিয় জাতি। তথাকথিত হিন্দু দেবদেবীর সঙ্গে আদিবাসী সমাজের দেবদেবীর পার্থক্য আছে। আদিবাসী জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে প্রকৃতি, বিশেষ করে পাহাড়–পর্বত–অরণ্য-অরণ্যের পশু ইত্যাদি। চাষবাস বর্তমানে অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবিকা হলেও অনেক উপজাতি এখনও যাযাবর এবং শিকার-নির্ভর। সিং, বোঙ্গা, মারাং বুরু, জাহের এরা, জাহিয়া বুরু, গোঁসায় এরা -- এই সমস্ত অদিবাসী দেবতা যেমন পূজিত হন তেমনই চাষবাস, জন্মমৃত্যু, সমস্ত সামাজিক কাজকর্মেই বিভিন্ন দেবতা পূজিত হন। প্রতি গ্রামেই কোনও না কোনও দেবতার থান থাকে। সব পূজাকে ঘিরেই আদিবাসীরা উত্সবে মেতে ওঠেন। ফসল বা শস্যকেন্দ্রিক উত্সবও অসংখ্য, আবার ‘ঘোটুল’-এর মতো সামাজিক রীতি পালনের অনুষ্ঠানগুলিও উত্সব হয়ে ওঠে।
কালক্রমে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উত্সবের উপর অন্য ধর্মেরও প্রভাব পড়েছে। যেমন এখন অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী দেওয়ালি, দশেরা, হোলি পালন করেন। একটা ভালো সংখ্যায় আদিবাসী খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করার খ্রিস্টান উত্সবগুলিও, বিশেষ করে উত্তর পূর্ব ভারতে ও পশ্চিম উপকূলে আদিবাসী সমাজে জনপ্রিয় হয়েছে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক কিছুই সভ্যতার নিরিখে অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। জন্মান্তর, পূর্বপুরুষদের আত্মা, অশুভ আত্মা, ভূত-প্রেত, দেবতা-অপদেবতা সমস্ত কিছুতেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস — আর এর সংশ্লিষ্ট বিপদআপদ তাড়াতে কিংবা কোনও কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে যা যা প্রথা পালিত হয় তা সবই উত্সবে পরিণত হয়।
দলবদ্ধ ভাবে নাচ গান বাজনা মদ্যপান পশুবলি -- সব আদিবাসী উত্সবেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এরই ফলে ভারতে লৌকিক সংস্কৃতির জগৎও সমৃদ্ধ হয়েছে। টুসু গান, ঝুমুর, ছৌ নাচ, ভূমিজ সম্প্রদায়ের কাঠি নাচ, গোন্দ কিংবা বাইসন হর্ণ মারিয়াদের মোষের সিং ধারণ করে নাচ — এই সব তাকিয়ে দেখার মতো অনুষ্ঠান আদিবাসী উত্সবেরই দান। এই উৎসবগুলিকে কেন্দ্র করে তথাকথিত সভ্য সমাজ বর্তমানে পর্যটন ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019
এখানে ভারতে মহিলাদের স্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।
ভারতের আদিবাসী মাত্রেই উত্সবপ্রিয় জাতি।
আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিক ব্যবস্থ...
হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্সবগুলির অধিকাংশ বেদ-পুরাণের ...