অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

হোলির উৎস ও নানা রূপ

হোলির উৎস ও নানা রূপ

ভারতবাসী সারা বছর ধরে যত উৎসব করে, তার মধ্যে হোলির সঙ্গে শাস্ত্রের সম্পর্ক সব চেয়ে কম আর বেলাগাম হুল্লোড় সব চেয়ে বেশি। ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎস, সাধারণত আগের রাত্রে হোলিকা দহন দিয়ে এর সূচনা হয়, তার পর সারা দিন অসহায় মানুষজনের উপর আবির এবং রঙের বর্ষণ চলে, শেষ হয় মিষ্টি এবং অন্য নানা খাদ্য ও পানীয়ের উল্লাসে। পণ্ডিত এস এম নটেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য: ‘এর সঙ্গে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কিছুমাত্র যোগ নেই, তবে নির্বোধ আচরণ আছে প্রভূত পরিমাণে।’

হোলি, তুমি কোথা হইতে আসিতেছ? উত্তর খুঁজতে হলে কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে যেতে হবে, সন্ধান করতে হবে নানান লোককথা এবং লোকাচারের গহনে। নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক নথি বা তথ্য খুঁজে কোনও লাভ নেই, ভারতের প্রধান ধর্মটির কাছে সে-সব অতি বিরক্তিকর। সপ্তম শতাব্দীতে রচিত দণ্ডিন-এর সংস্কৃত নাটক দশকুমারচরিত ও শ্রীহর্ষের রত্নাবলী-তে হোলির কথা আছে। পুরাণেও এই উৎসবের কথা ইতস্তত পাওয়া যায়। মুঘল মিনিয়েচারেও এ নিয়ে নানান কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। অক্সফোর্ড ডিকশনারি সপ্তদশ শতাব্দী থেকে হোলি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে: ১৬৮৭ সালে অক্সফোর্ড লিখেছে Houly, ১৬৯৮ সালে Hoolee, ১৭৯৮-এ Huli, ১৮০৯-এ Hoh-lee, ইত্যাদি। গল্প এবং আচার নানা জায়গায় ও নানা যুগে নানা রকম, কিন্তু বহু শতাব্দীব্যাপী ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের দাপটে উৎসবের সময় এবং মূল চরিত্রে দেখা গেছে আশ্চর্য ‘ঐক্য’। নাম অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম: বাংলা, ওডিশা ও অসমে দোলযাত্রা, বিহারে ফাগুন, মহারাষ্ট্রে শিম্গা, গোয়া ও কোঙ্কন উপকূলে শিগমো। আবার কোঙ্কনের দক্ষিণাঞ্চলে এই উৎসব উক্কুলি নামে পরিচিত, মালায়ালম ভাষায় এর নাম মঞ্জলকুলি, যার অর্থ হল হলুদ-স্নান। কর্নাটক ও তেলঙ্গানার মানুষের বিশ্বাস, পবিত্র অগ্নিতে যাঁকে দাহ করা হয় তিনি হোলিকা নন, তিনি হলেন কামদেব, আর তাই ওঁরা বলেন কাম-দহন। পঞ্জাবে এ সময় ঘরবাড়িতে নতুন রং করা হয়, মেয়েরা কাপড়ের উপর অপূর্ব সব হাতের কাজ করেন, বহুবর্ণ সেই শিল্পকর্মের নাম চক-পুরানা। তামিলনাড়ুতে উৎসবের নাম হয়ে যায় পানগুনি-উত্থিরম্‌, এবং অনেক প্রাক্-হিন্দু দেবতা এই দিন বিবাহবার্ষিকী পালন করেন; বুঝতে অসুবিধে হয় না, এ হল তাঁদের হিন্দু দেবলোকে আত্মসাৎ করার প্রকল্প। এখানে কোনও হোলিকা দহন হয় না, কারণ হোলি এখানে প্রধানত বসন্ত উৎসব, তবে অবশ্যই তাতে ধর্মের ভাগটা অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি। গুজরাতে হোলি চলে দু’দিন ধরে। হোলিকার আগুনে নারকেল এবং ভুট্টা আহুতি দেওয়া হয়। এই সময় রবিশস্য পেকে ওঠে, ফলে খাওয়াদাওয়া, নাচ, গানের ধুমধাম অনেক বেশি। কমবয়সি ছেলেমেয়েরা ননী-ভাণ্ডের দখল নিয়ে ‘লড়াই’ চালায়, সে উচ্ছ্বাসে প্রতিফলিত হয় বসন্ত, যৌবন, স্বাধীনতা। আসল হোলি অবশ্যই কৃষ্ণ-কানহাইয়ার মথুরা ও বৃন্দাবনে, তবে এখানেও বারসানার ‘লাঠ-মার হোলি’ নিয়েই সব চেয়ে মাতামাতি। মেয়েরা সত্যিই পুরুষদের লাঠিপেটা করে, ছেলেরা দৃশ্যত সেই আদরের মার খেয়ে গান গায়, মেয়েদের রাগিয়ে দেওয়ার গান, তারা কপট রাগে আরও মারতে থাকে।

গঙ্গার তীর ধরে আরও নেমে এলে দেখা যাবে, কানপুরে হোলি উদযাপিত হয় জাতীয়তাবাদী গঙ্গা মেলা হিসেবে, আবার বারাণসীতে কাদামাটি গায়ে মেখে কুস্তি না হলে চলে না। আরও নীচে বিহারে ফাগুয়ার প্রচলন, এটা মূলত ভোজপুরী উৎসব, সেখানে রঙের বদলে কাদার ব্যবহার অতি প্রশস্ত। তার পর দুধ এবং মশলা সহ ভাঙের সরবত, অর্থাৎ ঠান্ডাই, এবং ঢোলক বাজিয়ে নাচগান। আবার উত্তরে কুমায়ুন পাহাড়ে পনেরো দিন আগে থেকে স্থানীয় মানুষ মিলে হোলিকার কাঠামো তৈরি করে, তার নাম চীর বন্ধন। তার পর আসে হোলি-ধুলান্দি-র মাহেন্দ্রক্ষণ। ওডিশা ও বাংলায় দোলপূর্ণিমায় ঝুলনদোলায় রাধাকৃষ্ণের মিলন উদযাপিত হয়। বলা হয়, এই তিথিতেই শ্রীচৈতন্য তাঁর ভক্ত ও তীর্থযাত্রীদের মাধ্যমে পুরী থেকে বাংলায় দোল-উৎসব রফতানি করেছিলেন। হরিভক্তিবিলাস ও সমকালীন অন্যান্য লেখায় এই দোল-উৎসবের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু শ্রীচৈতন্যের জীবনীতে বা বৈষ্ণবপদাবলীতে নবদ্বীপে দোল উদযাপনের কোনও বিবরণ পাওয়া যায় না। ভগিনী নিবেদিতা বাংলার দোলযাত্রা নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী লেখা লিখেছিলেন, ১৯১৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে যেটি লন্ডনে প্রকাশিত হয়। তিনি দোলপূর্ণিমাকে শ্রীচৈতন্যের জন্মদিন হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এটি ‘প্রাক্-হিন্দু মানুষের প্রাচীন উৎসব’।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০১৫

সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate