হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্সবগুলির অধিকাংশ বেদ-পুরাণের দেবদেবী নির্ভর। পরবর্তী কালে লৌকিক দেবদেবীরাও অনেক সময়ই হিন্দু উত্সবের অন্তর্গত হয়েছেন। শুধু মাত্র দেবদেবীর পূজাকেন্দ্রিক উত্সব নয়, জন্ম, মৃত্যু, উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি কেন্দ্র করেও বহু হিন্দু উত্সব পালিত হয়। তার সঙ্গে ব্রতপালন ইত্যাদি তো রয়েছেই। বাঙালির কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে তাবৎ বাঙালি, বারো মাসে তেরো পার্বণ থাকলেও তাঁদের উৎসব বেশি নেই। যা আছে, তার বেশির ভাগ উৎসবই ধর্মীয়, কিছু পারিবারিক। কিন্তু সকল বাঙালি মিলে পালন করতে পারে—এমন উৎসব সত্যি বিরল। অঘ্রাণের শেষে, পৌষের শুরুতে নতুন ধান উঠলে চাষিরা খুশি হতেন, হয়তো একদিন নতুন চালের ভাত একটু আলাদা গুরুত্ব দিয়ে খেতেন। কিন্তু উৎসব হিসেবে এর সঙ্গেও হিন্দু ধর্মের একটা যোগাযোগ ছিল। সুবল মিত্রের অভিধান প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালের আগে। তাতে বলা হয়েছে যে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব পালন না করে নতুন ধানের চাল খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু তার থেকেও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, ভারতকোষে। তাঁর এই বর্ণনা এখন থেকে বছর পঞ্চাশ আগেকার। তখনই তিনি লিখেছেন, ‘পূর্বে ঘরে ঘরে এই অনুষ্ঠান এবং আনুষঙ্গিক উৎসবের প্রচলন ছিল।’ এ অনুষ্ঠানের বিবরণও দিয়েছেন তিনি। ‘অনুষ্ঠানের মুখ্য অঙ্গ ছিল নূতন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা।…দেবতা, অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়স্বজনকে দিয়া গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ আনুষ্ঠানিকভাবে নূতন গুড়সহ নূতন অন্ন গ্রহণ করিতেন। পৌষ সংক্রান্তির দিনও স্বতন্ত্রভাবে গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করিবার প্রথা ছিল।’ তার অর্থ এ অনুষ্ঠানও আধা-ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-৩৪) তাঁর অভিধানে ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকলেও তার প্রতি এত গুরুত্ব দেননি। বাঙালির কথা শেষ করে সরাসরি চলে আসি হিন্দু উৎসবের প্রসঙ্গে। হিন্দু উত্সবগুলিই সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং পরিচিত। তাই অসংখ্য হিন্দু উত্সবের মধ্যে পরিচিত উত্সবগুলিকে নিয়ে হিন্দু উত্সবের একটা রূপরেখা এরকম হতে পারে —
দিওয়ালি, নবরাত্রি, দশেরা, দুর্গাপূজা, হোলি, দোলযাত্রা, রামনবমী, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, গণেশ পূজা
পোঙ্গল, ওনাম, তীজ, নাগপঞ্চমী, বিহু, রাস, ছট, হনুমান জয়ন্তী, কালীপূজা, লোরি, কুম্ভমেলা, গঙ্গাসাগর মেলা, জ্বালামুখী মেলা, পুষ্কর মেলা, গঙ্গৌর, নন্দাযাত্রা, বসন্তপঞ্চমী তথা সরস্বতীপূজা, লাই হারোবা ইত্যাদি।
হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে উত্সব উত্তর ও দক্ষিণ উভয় ভারতেই চোখে পড়ে —পুরী জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা, বিভিন্ন শৈবমিন্দরের ডোলি যাত্রা (উত্তরাঞ্চল), তিরুপতি মন্দির উত্সব, সবরিমালা মন্দির উত্সব, গুরুভায়ুর মন্দির উত্সব, মীনাক্ষি মন্দির উত্সব, কলহস্তি মন্দির উত্সব, ত্রিসুরের পুরম উৎসব, পানঢারপুরের বিঠঠল দেবের উৎসব ইত্যাদি।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/22/2020
এখানে ভারতে মহিলাদের স্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।
মাছের রোগ প্রতিরোধ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা।
আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিক ব্যবস্থ...