সংসদ ভারতের সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনবিভাগ। নয়াদিল্লির সংসদ মার্গের সংসদ ভবনে এটি অবস্থিত। সংস্কৃত সংসদ (অর্থাৎ, সভা বা পরিষদ) থেকে এই নামটি গৃহীত হয়েছে। কোনও বিল আইনে পরিণত করতে সংসদের উভয় কক্ষে তা পাস হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। ভবনের সেন্ট্রাল হলটি সংসদের যৌথ অধিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। লোকসভা নামক নিম্নকক্ষ ও রাজ্যসভানামক উচ্চকক্ষ নিয়ে ভারতের সংসদ গঠিত।
ভারতীয় আইনসভা দুটি কক্ষে বিভক্ত— লোকসভা ও রাজ্যসভা। লোকসভার অনধিক ৫৫২ [৫৩০+২০+২] জন সদস্য। ৫৩০ জনসদস্য ২৮ টি রাজ্যের জনগণের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ২০ জন নির্বাচিত হন এবং ২ জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ানকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন। লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রতি পাঁচ বছরের মেয়াদে লোকসভা গঠিত হয়। মেয়াদ পূর্তির আগে সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। বর্তমান লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫। লোকসভা দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। লোকসভায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার বা অধ্যক্ষ । লোকসভায় নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য উপস্থিত না হলে বা কোরাম [Quoram] না হলে স্পিকার সাময়িক কালের জন্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করতে পারেন। দলমত নির্বিশেষে স্পিকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
(১) লোকসভার সদস্যগণ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
(২) বর্তমানে লোকসভার মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন। এর মধ্যে ৫৩০ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে এবং ১৩ জন সদস্য ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি থেকে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরাসরি ভাবে নির্বাচিত হন। কেবলমাত্র ২ জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন।
(৩) ২৫ বছর বয়সি যেকোনো ভারতীয় নাগরিক লোকসভার সদস্য হতে পারেন।
(৪) সাধারণ নির্বাচনের পর নতুন লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সদস্যরা একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করেন এবং এই সভার স্থায়িত্বকাল পর্যন্ত তাঁরা সভার কাজ পরিচালনা করেন। লোকসভার সদস্যরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন- লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে) রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ৫ বছরের আগেই লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন।
(১) যেকোনো বিল বা আইন-ঘটিত প্রস্তাব লোকসভায় ও রাজ্যসভায় অনুমোদন করাতে হয়।
(২) অর্থসংক্রান্ত বিল কেবলমাত্র লোকসভাতেই উত্থাপন ও পাশ করাতে হয়।
(৩) সংসদে গৃহীত বিল আইনে পরিণত করতে হলে রাষ্ট্রপতির লিখিত সম্মতির প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিল পুনর্বিবেচনার জন্য আবার সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন, কিন্তু অর্থবিল একবার লোকসভায় পাশ হলে রাষ্ট্রপতি তা পুনর্বিবেচনার জন্য আর সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না।
রাজ্যসভা ভারতীয় আইন সভার উচ্চ কক্ষ। এটি একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লোকসভার অবলুপ্তি ও পুনর্নির্বাচন ঘটে। কিন্তু রাজ্যসভা ভেঙে দেওয়া যায় না। এর সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন। এঁদের মধ্যে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজসেবার ক্ষেত্র থেকে ১২ জন জ্ঞানীগুনী সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন। এঁরা মনোনীত সদস্য নামে পরিচিত। রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর হলেও প্রতি দু-বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করা হয়। প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যগণের ভোটে রাজ্যসভার সদস্যগণ নির্বাচিত হন। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান সভার দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন। বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা ২৪৫। সরবরাহ-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাজ্যসভা লোকসভার সমান মর্যাদা ভোগ করে। সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার ক্ষমতা রাজ্যসভার চেয়ে বেশি। কোনো বিষয় নিয়ে দুই কক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়। তবে লোকসভার আকার রাজ্যসভার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায়, যৌথ অধিবেশনে লোকসভারই শক্তি বেশি থাকে। আজ পর্যন্ত সংসদে মাত্র তিনটি যৌথ অধিবেশন বসেছে। ২০০২ সালে সন্ত্রাস-বিরোধী আইন পোটা পাস করানোর জন্য শেষ যৌথ অধিবেশনটি বসেছিল।
তথ্য সকলন : বিকাশপিডিয়া টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/7/2020