একটি মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। লক্ষ-কোটির মারপ্যাঁচে না-ঢুকে বিষয়টিকে খুব ছোট মাপে বোঝার চেষ্টা করা যাক। কোনও পরিবারে কোন খাতে কত টাকা খরচের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সচরাচর সেটাকেই ধরে নেওয়া হয় সেই পরিবারের কর্তা বা কর্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির মাপকাঠি হিসেবে। অর্থাৎ ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় তাঁরা বেশি টাকার জোগান রাখছেন নাকি মাল্টিপ্লেক্সে ফিল্ম দেখার জন্য, পুষ্টিকর খাবারদাবারে বেশি খরচ করছেন নাকি জাঙ্ক ফুডে --- সেটাই সহজ বিচারে তাঁদের উদ্দেশ্য ও সদিচ্ছা মাপার সূচক বা ‘মেজারস অফ প্রায়রিটি’। সেই নিরিখে দেখতে গেলে এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে টেনেটুনে পাশমার্কও দেওয়া গেল কি ?
শিশুদের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় এ বারের বাজেটে সংস্থানের চেহারাটা তলিয়ে বোঝার আগে আরও এক বার অতীতের সঙ্গে তুলনা টানা জরুরি। যে কথা খানিক আগে বলার চেষ্টা করছিলাম, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বারই শিশুদের জন্য আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে সব চেয়ে কম। ২০১০-’১১-য় মোট বাজেটের ৪.১৩ শতাংশ ধার্য হয়েছিল শিশু-উন্নয়নমুখী কর্মসূচিতে। তার পরের দু’বছরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪.৬৪ ও ৪.৭৫ শতাংশে। কিন্তু ’১৩-’১৪ ও ’১৪-’১৫-য় শিশুদের জন্য ব্যয়-বরাদ্দের পরিমাণ ফের নেমে আসে যথাক্রমে ৪.৫৬ ও ৪.১৬ শতাংশে। আর এ বার সেটা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩.২৬ শতাংশে --- মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপি) নিরিখে দেখলে মাত্রই ০.৪১ শতাংশ। এ কথা বলার অর্থ অবশ্যই এমনটা নয় যে, ২০১১ থেকে ’১৩ --- এই তিন বছর বাজেটে শিশুদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বস্তুত, এ বারও বাজেটের আগে আমরা দাবি করেছিলাম, শিশুদের উন্নয়নে মোট বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ অবশ্যই বরাদ্দ হওয়া উচিত। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, শিক্ষক দিবসে দেশের সব ছাত্রছাত্রীকে বেতারে ও দূরদর্শনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রবল আগ্রহ ও উদ্যোগ দেখিয়েছিল তার সামান্য ছিটেফোঁটাও বাজেট প্রণয়নের সময় দেখা গেল না!
সূত্র : এই সময়, ১২ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019