ছোটু চায় লে আও’! শিশুর অধিকার নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা, অতএব চা চাই, অতএব ছোটু! কোনও কোনও শিশু অধিকারবিদ অবশ্য প্রতীকী প্রতিবাদে ছোটুদের আনা চা খান না, যদিও তাঁদের অনেকের বাড়িতেই ‘ছুটকি’দের ছাড়া সংসার চলে না। ছোটুদের মতোই দেশে অসংখ্য ছুটকিও শৈশব হারিয়ে রোজগারের পথে নামতে বাধ্য হয়, প্রায় মায়ের কোল-ছাড়া হওয়ার মুহূর্তেই। ২০১১-র জনগণনা আমাদের জানাচ্ছে, সারা দেশে ৪,৩০,৭৮৫ এমন ‘কর্মী’ আছে, যাদের বয়স, চমকে উঠবেন না, মাত্র পাঁচ বছর! এবং মনে রাখা ভাল, জনগণনার সংজ্ঞা অনুযায়ী কর্মী তাঁরাই, যাঁরা অর্থকরী উপার্জনের সঙ্গে পূর্ণ সময় যুক্ত: বছরে ১৮৩ দিন বা তার বেশি কাজ করলে মুখ্য কর্মী, তার কম হলে প্রান্তিক কর্মী।
শিশু অধিকার নিয়ে কত আইন, কত বাগ্বাজি, কুম্ভীরাশ্রুর বন্যা, অথচ সারা দেশে এখনও মোট কর্মীর প্রতি কুড়ি জনের মধ্যে এক জন হচ্ছে ৫-১৭ বছর বয়সি শিশু, সংখ্যাটা প্রায় আড়াই কোটি। এদের মধ্যে প্রায় এক কোটিই হচ্ছে ছুটকিরা। মোট শিশু কর্মীর নিরিখে মেয়েদের সংখ্যাটা কম মনে হচ্ছে বটে, কিন্তু মোট নারী কর্মীর মধ্যে এদের অনুপাত (৬.৩ শতাংশ) পুরুষদের অনুপাত (৪.৩ শতাংশ)-এর চেয়ে বেশি।
এ তো গেল মোটের হিসেব। যতই সামাজিক বিভাজনের সিঁড়ি ধরে নীচে নামা হবে, ততই দেখা যাবে অবস্থাটা ভয়াবহতর: দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যে শিশু কর্মীর অনুপাত যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে নারী কর্মীদের মধ্যে শিশুদের অনুপাত। আদিবাসীদের মধ্যে অবস্থাটা কতটা খারাপ, সেটা অন্য একটা অংক থেকে পরিষ্কার। মোট শিশু কর্মীর ১৭ শতাংশই আদিবাসী, যদিও জনসংখ্যায় তারা মাত্র ৯ শতাংশ।
সর্ব শিক্ষা অভিযান এক দশক অতিক্রান্ত, শিক্ষার অধিকার আইনের বয়সও অর্ধ দশক, শিশুরা ইস্কুলে আসছে এমন আনন্দঘন সংবাদে দেশের আহ্লাদ ধরে না। কিন্তু এই কয়েক কোটি শিশুর কী হবে, যারা বাস্তবিক পক্ষে সংসার টানে? বয়সের হিসেবে দেখা যাচ্ছে মোট শিশু কর্মীদের মধ্যে শতকরা ১১ জনেরই প্রাথমিক স্তরে পড়ার কথা, আর ৩২ শতাংশের পড়ার কথা উচ্চ প্রাথমিক স্তরে। এই ৪৩ শতাংশ (সংখ্যায় কোটিখানেক) হচ্ছে শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায়। আইনের চোখে সকলে সমান, কিন্তু আইন সবার জন্য কতটা সমান? শিশুশ্রমও তো আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু সে আইনই বা সকল শিশুর জন্য কতটা সমদর্শী?
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ মার্চ, ২০১৫
গ্রাফিক্স : আনন্দবাজার পত্রিকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/7/2019