অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

রাজ্যওয়াড়ি অবস্থা: কিছু তথ্য

রাজ্যওয়াড়ি অবস্থা: কিছু তথ্য

শিশু শ্রমিক বলতে সাধারণত ছোটু-ছুটকিদের কথাই লোকে বুঝে থাকে,  কিন্তু বাস্তবত আইন, সুভদ্র সমাজ, উন্নয়নের জয়ধ্বজার অন্তরালে যে শিশুরা ‘দেহশ্রম’ বিক্রি করে চলেছে, তারা ছড়িয়ে আছে নানান ক্ষেত্রে, বেশির ভাগই কৃষিকর্মে: চাষবাসে শতকরা ২৩ ভাগ এবং খেতমজুরিতে ৩৮ ভাগ। শিশুশ্রম বিষয়ক আলোচনায় এই কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্তদের কথাটা যে আসেই না, তার কারণ বোধহয় এই শিশুদের সামাজিক অবস্থান, যারা প্রধানত দলিত বা আদিবাসী, উন্নয়নের নানান সূচক অনুযায়ী যে  গোষ্ঠীগুলো সুযোগবঞ্চনার জীবন্ত নমুনা। অথচ পথ যে একেবারেই নেই, তা নয়। আমরা যদি শূন্যকুম্ভ নৈতিকতা এবং শুষ্ক সংবেদনশীলতা থেকে বেরিয়ে সহজ সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান-নির্ভর যুক্তিকে অবলম্বন করি, তা হলে যে পথ একটা পাওয়া যায়, তার ইঙ্গিতও জনগণনার হিসেব থেকে স্পষ্ট। যেখানে সারা দেশে মোট কর্মীর ৫ শতাংশ হচ্ছে শিশু, সেখানে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, কেরল, তামিলনাড়ু ও ত্রিপুরাতে সংখ্যাটা অনেক কম: যথাক্রমে ০.৯, ২.৪ ও ২.৯ শতাংশ। সাফল্যের কারণটির পিছনে ব্যাখ্যা একটাই: রাজ্যগুলো ইট-সিমেন্ট-কংক্রিট-নির্ভর অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দেবতার পদতলে নিজেদের সঁপে না দিয়ে একেবারে গোড়ার কাজটাতে মনোনিবেশ করেছে। এ কাজট হল মানব সক্ষমতার বৃদ্ধির ভিতর দিয়ে সমাজে সকল মানুষের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার একটা ভিত্তি গড়ে তোলা। শিশু পুষ্টি, শিশু স্বাস্থ্য, শিশু শিক্ষার মতো বিষয়গুলিতে এই সব রাজ্য যে প্রাধান্য অর্পণ করেছে, তার সুফল হিসেবেই সেখানে হৃতশৈশব শিশুদের সংখ্যাটাকে কমিয়ে আনা গেছে। বিপরীতে, উন্নয়নের যে গুজরাত মডেল অনুসরণ করে দেশকে বিশ্ব অর্থনীতির মহারথীদের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলার স্বপ্ন বিক্রি করা হচ্ছে, সেখানে মোট কর্মীর মধ্যে শিশু কর্মীর অনুপাত ৫.২ শতাংশ, সংখ্যায় তেরো লক্ষের বেশি। হিন্দি বলয়ের রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, সর্বত্র সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের ভয়াবহ অনুন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশু কর্মীর অনুপাত ৬ শতাংশের উপরে।

পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ে জানতে কৌতূহল হচ্ছে? তা হলে বলি, অর্থনীতি এবং সমাজের অধিকাংশ বিষয়ে যে মধ্যমান আঁকড়ে ধরে থাকার দূর  প্রতিজ্ঞায় এ রাজ্য অনড় এবং যার ফলে উন্নয়নের প্রায় সব সূচকেই দেশের মধ্যে তার স্থান মোটামুটি মাঝামাঝি, শিশু কর্মীর অনুপাতের দিক দিয়েও সেই অচলায়তনের ব্যত্যয় ঘটেনি: অনুপাতটি ৪.৫%, গুজরাত বা হিন্দি বলয়ের থেকে অবশ্যই ভাল, কিন্তু কেরল, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা থেকে অনেকটাই খারাপ।

শিশু কর্মীদের এই কাহিনিটি কেবল শিশুদের বঞ্চনাতেই শেষ হয়ে যায় না, এই শিশুরাই বড় হয় ঊনমানবের  মতো। তারা যা হতে পারত এবং তা হয়ে ওঠার জন্য যা করতে পারত, সেই সক্ষমতার অভাবটাই প্রভাব ফেলে, শুধু তাদেরই জীবনে নয়, গোটা দেশের উৎপাদনশীলতায়। তার চেয়েও বড় কথা, তাদের প্রতি ওই যে দৃষ্টিভঙ্গি, অবহেলা ও বঞ্চনার উপর নির্ভর করে অনৈতিকতার যে সৌধ নির্মাণ, তা তো আসলে গোটা দেশের নৈতিক ভিতটাকেই দুর্বল করে রাখে। এই খণ্ডিত নৈতিকতার জৌলুস নিয়ে চাঁদ ধরার আস্ফালন চলে, কিন্তু চাঁদ অধরাই থেকে যায়। ছোটু ও ছুটকি-রাও যে ভারতবর্ষেরই অংশবিশেষ, এই তথ্য-বিস্ফোরণ সেই দেশটাকেই ছোট করে। সেই বোধ কবে আসবে?

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ মার্চ, ২০১৫

ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/3/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate