প্রচলিত ধারণা : এইচআইভি/এইডস প্রাপ্তবয়স্কদের সমস্যা। শিশুদের এ বিষয়ে জানার দরকার নেই। এইচআইভি/এইডস, প্রজননকালীন স্বাস্থ্য, যৌনতা ইত্যাদি বিষয়ে শিশুদের জানানো মানে তাদের মন দূষিত করা। এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ইতিহাস আছে এমন কোনও পরিবারের শিশুকেই শুধুমাত্র সতর্ক রাখা দরকার এবং যতটা সম্ভব দূরে রাখা দরকার যাতে এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে না পড়ে।
বাস্তব: এইচআইভি/ এইডস আক্রান্তদের কখনওই, বয়স, চামড়া, রঙ, জাত, শ্রেণি, ধর্ম, ভৌগোলিক স্থান, আদর্শের নীচতা, ভালো বা খারাপ কাজ প্রভৃতি দ্বারা পার্থক্য করা যায় না। সব মানুষই এইডস-এ আক্রান্ত হতে পারে।
এইচআইভি অর্থাৎ হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস শরীরে এইডস রোগের সৃষ্টি করে। এইচআইভি পজিটিভ যে কোনও মানুষের শরীরের তরল, যেমন বীর্য, স্ত্রীযোনি থেকে নির্গত তরল, রক্ত ও মায়ের দুধ থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এইচআইভি ইনজেকশনের সূচে যদি এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত থাকে এবং সেই সূচ যদি ইনজেকশনের সাহায্যে ওষুধ নেওয়ার ক্ষেত্রে বা উল্কি আঁকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তা হলেও এইডস হতে পারে।
হাজার হাজার শিশু আজ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবেএইচআইভি/এইডস-এর শিকার। বাবা-মায়ের অকাল মৃত্যুর কারণে বাচ্চারা অনাথ হয়ে যায়, অভিভাবকদের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়।
মায়ের কাছ থেকে শিশুর কাছে এই রোগ পরিবাহিত হয় সব থেকে বেশি। যে হারে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের হার বাড়ছে তার ফলে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব থেকে বেশি। ছোট শিশুদের মধ্যে মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্তি আরও একটি ভয়াবহ সমস্যা। এমতবস্থায় শিশুদের এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে না জানানোটা মোটেই সুখকর হবে না এবং এই মারণ রোগ থেকে যাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে তাদের সেই অধিকার দেওয়া উচিত।
এশিয়ার মধ্যে ভারতবর্ষে এইচআইভি /এইডস-এ আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি । ভারতের পরেই রয়েছে চিন। ইউএনএইডস এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের ০-১৪ বছর বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে ১ লক্ষ ৬০ হাজার শিশু এইচআইভি পজিটিভ।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কেরলের পারাপ্পানগারির একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে, অভিভাবক এবং শিক্ষক অ্যাসোশিয়েসন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে, বাবা এইডস-এ মারা গেছে বলে ছয় বছরের ববিতা রাজকে স্কুল করতে দেওয়া হয়নি। সমাজকর্মী এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যস্থতা এবং মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অনুযায়ী মেয়েটির শরীরে এইচআইভির জীবাণু নেই, এটা জানানো সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নেয়নি। স্থানীয় সরকারি স্কুলও একই আচরণ করেছে।
উৎস : ফিউচার ফরসেকেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, পৃ. ৭৩, ২০০৪
এটা আমাদের বোঝা উচিত যে ছোঁয়াছুয়ির দ্বারা এইচআইভি সংক্রমিত হয় না। অথবা সংক্রমিত শিশুর পাশে বসলে বা চুমু খেলে, জড়িয়ে ধরলে বা খেলাধূলা করলেও সংক্রমণ হয় না।
এটা সত্য যে শিশুদের এইচআইভি/এইডস, প্রজননকালীন স্বাস্থ্য, যৌনতা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষিত করার জন্য সব সময় তাদের সুবিধা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মনের কথা ভেবে তাদের মতো করে কথা বলতে হবে। আসল কথা আমরা নিজেরাই ঠিক করে উঠতে পারি না শিশুদের সঙ্গে এ বিষয়ে কী ভাবে কথা বলব, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেরাই অস্বস্তি বোধ করি। তাই বিষয়টাকে আমরা এড়িয়ে যেতে চাই। তার ফলে শিশুরাও বিষয়টা এড়িয়ে যায় । তাই জীবনশৈলী শিক্ষার বিষয়টা অবহেলা না করে আমাদের খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। যৌন শিক্ষা এর মধ্যেই পড়ে।
এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে জনসাধারণের সম্যক ধারণা ছিল না বলে, অতীতে পরিবারের কেউ এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত হওয়ায় অনেক স্কুল থেকে বাচ্চাদের বের করে দেওয়া হত । অথবা যদি কখনও শোনাও গিয়ে থাকত, কোনও শিশুর পরিবারের কোনও ব্যাক্তি এইডস আক্রান্ত, তা হলে পরে এ কথা ভুল প্রমাণিত হলেও কেউ বিশ্বাস করত না এবং শিশুটিকে আলাদা করে দেখা হত। কিন্ত্ত ভারতীয় সংবিধান সব সময় সমানাধিকারের কথা বলে এবং যে কোনও রকমের ভেদাভেদ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, একথাও বলে।
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি যদি সঠিক চিকিত্সা করান তবে বহু দিন পর্যন্ত তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী থাকবেন ও তার থেকে এই রোগের জীবাণু অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হবে না। যদি কোনও শিশু সত্যি রোগে আক্রান্ত হয় ও তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় তবে সেই শিশু দেখাশোনার অভাবে ও চিকিত্সার অভাবে অন্যত্র সংক্রমণ ঘটাবে। রোগীকে আলাদা করে দিলে এই রোগের সংক্রমণ এড়ানো যাবে না।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020
এখানে এই নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কী ভাবে রক্ষা করবেন এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের অধিকা...
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের তিনটি অধিকারের কথা বলা হ...
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের তিনটি অধিকারের কথা বলা হ...