অসংখ্য প্রচলিত ধারণার বন্ধনে আমরা বাঁধা পড়ে আছি। কেবলমাত্র বাস্তবটা জানলেই আমরা দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব!
প্রচলিত ধারণা: যে কোনও মূল্যে ছেলে চাই, কিন্তু তার জন্য চার পাঁচটা মেয়ের জন্ম দেব কেন ?
কন্যাসন্তান কে বড় করা মানে প্রতিবেশীর বাগানে জল দেওয়া। আপনি তাদের বড় করবেন, সকল রকম বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করবেন, তাদের বিয়ে ও বিয়ের পণের জোগাড় করবেন কিন্ত্তু অবশেষে তারা আপনাকে ছেড়ে চলেই যাবে। ছেলেরা নিদেন পক্ষে বংশরক্ষা করবে, বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের দেখাশোনা করবে এবং বাবা মায়ের শেষকৃত্য তারাই সম্পাদন করবে।
কন্যাসন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর কোনও কারণ নেই। তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার বা তাদের ইচ্ছানুসারে কোনও কাজ করতে দেওয়ার মানেই হয় না যত দিন না তাদের বিয়ে হয় । কারণ এ সমস্তই পরিবারের অতিরিক্ত দায়।
বাস্তব: পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এটাই নিয়ম। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় এসেছে। সাধারণ মানুষ তার ছেলের বিয়েতে যতটা খরচ করে মেয়ের বিয়েতে ততটাই খরচ করে। কিন্তু চালাকি করে বলা হয় “আমরা মেয়ের বিয়েতে পণ দিলাম”। মূলত মেয়েকে এটা পরোক্ষে বলে দেওয়া হয় পৈতৃক সম্পত্তিতে তোমার কোনও অধিকার নেই। সব সময় মনে রাখবেন পণ দেওয়া ও নেওয়া দু’টোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করাটাও বেআইনি।
যে কোনও ক্ষেত্রেই জীবনের বাস্তবতাকে আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে গেলেই বুঝতে পারা যায় ছেলেরা বাবা-মায়ের দেখাশোনা কতদূর করে। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দেখাশোনা মেয়েরাই করছে।
মেয়েদেরও ছেলেদের মতোই বেঁচে থাকার অধিকার, উন্নতির অধিকার, সুরক্ষার অধিকার এবং কোনও কিছুতে অংশ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।
এ সব অধিকার থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা মানেই লিঙ্গ বৈষম্য এবং দারিদ্রের দুষ্টচক্রকে চিরস্থায়ী করা ।
বহু যুগ ধরে মেয়েরা জীবনের যে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার, তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আমরা সব সময় আমাদের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর কথা ভুলে যাই। তিনি বলেছিলেন - “এক জন পুরুষকে শিক্ষিত করা মানে এক জন মানুষকে শিক্ষিত করা, কিন্তু এক জন নারীকে শিক্ষিত করা মানে গোটা সমাজকে শিক্ষিত করা” ।
কন্যাসন্তানকে যদি সুযোগ সুবিধা দিয়ে বড় করা হয়, খুব সহজেই তারা ভাল এবং মন্দ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে এবং জীবন সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমরা মেয়েদের স্বাধীনতা দিতে ভয় পাই। এর একটাই সমাধান। আমাদের এটা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, যে কোনও মানুষের মতোই শিশুকন্যারও মানবাধিকার রয়েছে। যদি মেয়েদের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ জাতীয় সমস্যা হয়, তবে এটা মনে রাখা জরুরি যে মেয়েদের ক্ষমতায়ন না করাটা, তাদের দুর্বলতাকে বাড়ানোর সামিল।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৪০ জন মহিলা রয়েছে। এই লিঙ্গ অনুপাত থেকে দেখা যাচ্ছে , ২০০১ সালের থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ২০০১ সালে ১০০০ পুরুষে মহিলার সংখ্যা ছিল ৯৩৩। দশকের পর দশক ধরে ভারতে পুরুষের তুলনায় মহিলার পরিমাণ কমেছে। কিন্তু গত দু’দশকে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। গত পাঁচ দশকে প্রতি ১০০০ পুরুষে মহিলার সংখ্যা ৯৩০ থেকে শুরু করে বর্তমানে ৯৪০-এ পৌঁছেছে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020