স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটির সূত্রপাত উনিশশো পঞ্চাশের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে। উদ্দেশ্য ছিল আগাম পরিকল্পনা করে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের প্রক্রিয়াটিকে পরিচালিত করা যাতে বৃদ্ধির হার বাড়ে। পরবর্তী তিন দশকে সে গুড়ে বালি পড়েছিল। আমাদের আর্থনীতিক বিকাশের হারটি ৩-৩.৫ শতাংশ ছাড়াতে পারেনি। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রাজকৃষ্ণ হতাশ হয়ে এই বৃদ্ধির হারটিকে ‘হিন্দু বিকাশের হার’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সেই দিন আজ ইতিহাস। সাম্প্রতিক কালে ভারতের বৃদ্ধির হারটি অনেক দেশের কাছেই ঈর্ষণীয়। প্রায়শই তা ৮-৯ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর বৃদ্ধির হারের এই উল্লম্ফনের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ গতিতে বেড়ে চলেছে বিদ্যুতের চাহিদা। এই যুগ যে শক্তি সভ্যতার যুগ। আর বিদ্যুতের এই চাহিদা তৈরি করেছে নতুন সঙ্কট। বিদ্যুতের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটছে। অর্থনীতির বিকাশের সঙ্গে পরিবশের গুণমানের একটি সঙ্ঘাত তৈরি হচ্ছে। শক্তির সঙ্কটজনক পরিস্থিতিটিকে এই শ্যাম রাখি না কূল রাখি জাতীয় সমস্যার আঙ্গিকেই বিচার করতে হবে। অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক রেকর্ড অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদার পরিমাণের দিক দিয়ে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়, চিন ও আমেরিকার পরেই, ১৯৯০-২০০৯ এই সময়ের মধ্যেই ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সবই ঠিক, কিন্তু তার পরেও ভারতে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার যে কোনও উন্নত দেশের তুলনায় তো বটেই, এমনকী কিছু কিছু বিকাশশীল দেশের থেকেও কম। আর এই কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় ভারত বারবার দাবি করে চলেছে, আগে উন্নত দেশগুলিতে নিঃসরণের মাত্রা কমাতে হবে, তার পর ভারতের প্রসঙ্গ আসবে। এর পাল্টা দাবি হিসাবে উন্নত বিশ্ব বলছে, ভারতে মাথাপিছু নিঃসরণ কম হলেও নিঃসরণ বৃদ্ধির হার অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং ভারতকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020