বিশ্ব উষ্ণায়ন কিন্তু কোনও স্থানীয় সমস্যা নয়, নামেই মালুম তা বিশ্বজনীন। ভারতের বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে আমেরিকার বায়ুমণ্ডলও গরম হবে।
আবার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় তার চরিত্রটি জানার কারণেই উন্নত কয়লা আমদানি করে, উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা থেকেও ভারতকে সরে আসতে হবে। বিকল্প জ্বালানির কথা ভাবতেই হবে। সমস্যা হচ্ছে, দ্বিতীয়টি যে উৎস থেকে ভারতে শক্তির সর্বাধিক জোগান আসে সেটি জীবভর জাত জ্বালানি, মানে গাছের ডাল, গোবর, শুকনো পাতা ইত্যাদি। এদের মধ্যে গোবর থেকে অল্পস্বল্প বিদ্যুৎ তৈরি হলেও বাকিগুলি মূলত রান্নার জ্বালানি হিসাবেই কাজে লাগে। হিসেবমাফিক দেশে নগরায়নের কাজটি যত বেশি হবে তত এই ধরনের জ্বালানি ব্যবহার কমে আসার কথা। কিন্তু ২০০৯-১০ সালেও জ্বালানির প্রশ্নে ডালপালা-পাতার উপর নির্ভরশীল গৃহস্থের সংখ্যা ছিল ৭৬.৩ শতাংশ, ১৯৯৩-৯৪ সালের তুলনায় যা মাত্র ২ শতাংশ কম (সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসস্টিকাল অফিস ২০১৩)। জ্বালানির এই চিরাচরিত উৎসটির উপর নির্ভর করার সমস্যা হচ্ছে এই যে এর ফলে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের উত্তর দিকের আকাশে জমা হচ্ছে বাদামি মেঘ, মেঘকে অভিহিত করা হচ্ছে এশিয়ান ব্রাউন ক্লাউড হিসাবে। এই বাদামি মেঘ, গবেষণা বলছে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উষ্ণায়নের মাত্রা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। (রাই,২০০৯)
সুতরাং কয়লা হোক বা জীবভর জাত জ্বালানি, শক্তির এই চিরাচরিত উৎসগুলির ব্যবহার থেকে ভারতকে সরে আসতে হবে। ঝুঁকতে হবে অচিরাচরিত, পুনর্নবীকরণযোগ্য, পরিবেশ-বান্ধব উৎসের দিকে। শক্তির সঙ্কট সামলানোর জন্য দ্বিতীয় কোনও বিকল্প আমাদের হাতে নেই, এখনও পর্যন্ত নেই।
এখানে কয়েকটি কথা মনে রাখতে হবে। ভারতে বর্তমানে যে প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করা হয় তাতে খনন কার্য চালানো যায় ৩০০ মিটারেরও কম গভীরতা পর্যন্ত। অথচ ভারতে কয়লা সঞ্চয়ের যা হিসাব করা হচ্ছে তার ৪০ শতাংশই আছে ৩০০ মিটারের তলায়।
সাধারণ ভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত কয়লার ব্যবহার ও বাণিজ্য হয় তাদের তাপমূল্য ৬০০০কিলোক্যালরি/কেজি। ভারতে কয়লার তাপমূল্য সেখানে ৪৫০০ কিলোক্যালরি/কেজি।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/18/2020