বিগত দু'দশকের বেশি ধরে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিদ্যুৎ উত্পাদনে অচিরাচরিত শক্তির উত্সগুলিকে নানা ভাবে ব্যবহারের এক প্রয়াস চালাচ্ছে। বেশির ভাগ রাষ্ট্রই এ বিষয়ে উন্নয়নে গতি আনার জন্য ২০২০ এবং ২০৫০ সালের 'টার্গেট' ঘোষণা করেছে। সাধারণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রিডকে ব্যবহার করার প্রবণতা থাকা স্বাভাবিক, যার ফলে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। এই ধরনের সমস্যা নিরসনে ‘গ্রিডে প্রবেশের মাশুল’ (ফিড-ইন-টারিফ বা সংক্ষেপে ফিট) একটি পদ্ধতি ।
ফিড-ইন-টারিফ বিষয়ে মনোগত সাধারণ ভাবের প্রথম প্রকাশ ঘটে জার্মানিতে ১৯৯১ সালে, রিয়ো বসুন্ধরা শীর্ষ সম্মেলনেরও আগে, যখন জার্মানি শক্তি-বিষয়ে সংস্কার করার চিন্তা করছে। তাদের চিন্তা ছিল অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে গ্রিড-সংযোগের কথা। সংস্কারের পিছনে যে দর্শন কাজ করছিল তা হল, অল্প শক্তি ব্যবহার সত্ত্বেও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সম্ভব। প্রসঙ্গত, জার্মানি ফিট বিষয়ে আইন করে ২০০০ সালে ( যা লৌকিক ভাবে জ্ঞাত হয় ইইজি-র দ্বারা), যার ভিত্তি ছিল (ক) অচিরাচরিত শক্তিগুলি অগ্রাধিকার পাবে শক্তি ব্যবহারে, (খ) অচিরাচরিত শক্তিতে লগ্নিকারীরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাবে এই লগ্নির জন্য, মাশুল যাই হোক না কেন ।
মোটামুটি ভাবে বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রই আজ গ্রহণ করেছে ফিট, যার ফলে সহজ, স্বল্প খরচার এই কৌশল অনেক রাষ্ট্রকেই সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে ।
উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির ফিট আইনে সম্ভব হয়েছে বিগত বছর পনেরোর মধ্যে ৩২০,০০০ নতুন কাজের সৃষ্টি করা (বার্লিনার ৎসাইটুং ২০১৩)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে (যদিও অত্যন্ত ক্ষুদ্র ভাবে সাধিত হয়েছে) এই সংখ্যা ৩৫০,০০০ (ইউসিএস ২০০৫)। স্পেনে আজ পর্যন্ত ১০০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে (লুনগেস্কু ২০০৭)। এবং এতেই নিশ্চিত বৃদ্ধি পাবে নতুন লগ্নি, নতুন নতুন ডিজাইন ও কৃত্কৌশলের ফলে। কর্মসংস্থান আরও বাড়বে যত বেশি রাষ্ট্র এই নতুন কর্ম-পদ্ধতি গ্রহণ করবে। তা ছাড়া, সাধারণ গৃহস্থবাড়ির জন্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ-উত্পাদনযন্ত্র নির্মাণ, বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ, ম্যানেজমেণ্ট, বিক্রয় ও নানা উপদেশ সহ নানা ধরনের কাজ সৃষ্টি হবে যার জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর কর্মীর।
অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ফিট আইনকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে প্রতি দেশেই ।
সূত্র : শঙ্কর সেন, প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, অবসর ওয়েবসাইট
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/11/2020