পরিবেশ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশ্ব কমিশন (ব্রান্ডট ল্যান্ড কমিশন) নিরন্তর বিকাশের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন এই ভাবে— বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে যে উন্নয়ন বা বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকে — তাই হল নিরন্তর বিকাশ। আন্তঃপ্রজন্মের মধ্যে সমতার এক ভারসাম্য রক্ষার উপরও জোর দেওয়া হয় এই নিরন্তর বিকাশের কাজে। বিগত ২০০২ সালে নিরন্তর বিকাশ সংক্রান্ত যে বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে নিরন্তর বিকাশ বা উন্নয়নের ধারার তিনটি মূল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয় — অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত উন্নয়ন। এই তিনটি বিষয়ই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্য দিকে ২০১২ সালে নিরন্তর বিকাশের উপর আয়োজিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলিকে স্বীকার করে নিয়ে এবং সেগুলিকে সংহত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়। নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে তোলার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয় যাতে নিরন্তর উন্নয়নের তিনটি মাত্রার মধ্যেই এক সংহত ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
তবে সরকারি নীতি প্রণয়ন বা অনুসরণের ক্ষেত্রে নিরন্তর উন্নয়ন ধারার তিনটি বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন নিঃসন্দেহে এক দুরূহ কাজ। এর সঠিক রূপায়ণে এক দিকে যেমন দেশের জাতীয় পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতাকে বুঝতে হবে, অন্য দিকে তেমনই নীতির অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ক্ষেত্র, বিভিন্ন লক্ষ্যের মূল্যায়ন, সম্ভাব্য ব্যয়, প্রয়োজনীয় নকশা ছকে ফেলার কাজ এবং নিরন্তর উন্নয়ন প্রচেষ্টার তিনটি মূল বিষয় সম্পর্কেও সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
অর্থনৈতিক তথা মানবীয় উন্নয়নের জন্য শক্তি বা জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, জলবিদ্যুৎ, পরমাণু বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি এবং অবাণিজ্যিক জ্বালানি—এ ধরনের প্রাথমিক জ্বালানি উৎস রয়েছে বেশ কয়েকটি। আবার শক্তি বা জ্বালানি সংক্রান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও রয়েছে অনেকগুলি। যেমন অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি, সুলভ দামে জ্বালানি সংগ্রহ, পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা এবং শক্তি নিরাপত্তা।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019