বড় বড় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য বৃহদাকার বাঁধ এবং এই সব বাঁধ ঘিরে তৈরি হয়েছে বৃহদাকার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। বর্তমানে দেশে রয়েছে ৪,৭১১টি বড় বাঁধ এবং আরও ৩৯০টি বৃহৎ বাঁধ গঠনের কাজ চলছে পুরোদমে। বাঁধের সংখ্যার বিচারে ভারতের স্থান তৃতীয়। এ ব্যাপারে প্রথম স্থানে রয়েছে চিন এবং দ্বিতীয় স্থানে আমেরিকা। দেশের জলসম্পদ উন্নয়ন ও জলসম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বাঁধগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কেবলমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, শুখা মরশুমে বাঁধগুলির ছাড়া জলে চলেছে সেচের কাজ, অতি বৃষ্টিতে জল ধরে রেখে বাঁধগুলি বন্যানিয়ন্ত্রণেরও সহায়ক হয়। তা ছাড়া এই সব বাঁধ ও ব্যারেজকে ঘিরে্ পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র। বরাকর ও দামোদর নদের উপর গড়ে উঠেছে এই দু’টি বাঁধ। জলে রয়েছে নৌকা বিহারের ব্যবস্থা। প্রকৃতির কোলে চার দিকে সবুজ পরিবেশে গড়ে উঠেছে হোটেল এবং রিসর্ট। এই সব অঞ্চলে পর্যটনকে কেন্দ্র করে আর্থিক বিকাশেরও সুযোগ রয়েছে।
তবে এই সব বড় বাঁধ গড়ে তোলার প্রথামিক পর্বটা কিন্তু সুখের হয়নি। কারণ প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে উচ্ছেদ করতে হয়েছে। নর্মদা নদীর উপর সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মানুষের আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। তা ছাড়া উত্তরাখণ্ডে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম বাঁধ টেহেরি বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন মানুষ। বেশির ভাগ বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ এবং আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। কারণ মানুষের উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন ও জীবিকায় টান ধরেছে। বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে, মৃত্যু ঘটেছে অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। তা ছাড়া প্রকৃতির উপরও এই বিরাট বাঁধ নির্মাণের ক্ষতিকর প্রভাব কম নয়। কারণ এর ফলে নদীর গতিপথের পরিবর্তন এবং পরিবেশ ভারসাম্যের উপর আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া বেশি বৃষ্টিপাতের সময় এই সব বাঁধের ছাড়া জলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এক বিশাল এলাকায় যে বন্যা নেমে আসতে পারে তা তো পশ্চিমবঙ্গবাসী প্রায় প্রতি বছর প্রত্যক্ষ করছেন।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020