দেশে কয়লা এবং তেলের উৎস সীমিত। নতুন আবিষ্কার না হলে আগামী দু’ দশকের মধ্যে আমাদের কয়লার ভাণ্ডার নিঃশেষ হতে পারে। দেশের অপরিশোধিত তেল এবং গ্যাসের উৎপাদনও সীমিত এবং কয়লা, গ্যাস বা তেল — এই সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রেই আমরা বিদেশের উপর নির্ভরশীল। এগুলি কিনতে আমাদের বিদেশি মুদ্রার খরচের পরিমাণও কম নয়। অন্য দিকে দেশে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় তেল ও গ্যাসের ব্যবহারও দিন দিন বেড়ে চলেছে। কারণ বেশির ভাগ মানুষই এখন গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকেছে। তা ছাড়া যাতায়াতের বহর বেড়ে যাওয়ায় আরও গাড়ির প্রয়োজন। বছরে ১৫ লক্ষ নতুন গাড়ি বাজারে আসছে। ফলে বাড়ছে তেল ও গ্যাসের চাহিদা। এক হিসাবে জানা যায় আগামী বিশ বছরে এই চাহিদা দ্বিগুণ আকার ধারণ করতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির নিজস্ব চাহিদা তো রয়েছেই, এ ছাড়া রয়েছে আনুষঙ্গিক চাহিদা। যেমন এক বিরাট পরিমাণ ডিজেল লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃষকরাও সেচের কাজে ব্যবহার করছেন এই ডিজেল। এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে ভবিষ্যতে তেল ও গ্যাস আমদানির পরিমাণও বাড়াতে হবে আর এর ফলে যে অতিরিক্ত বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হবে তা সামাল দেওয়া হয়তো দেশের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তা ছাড়া লোডশেডিং-এর দাপটে ছোট ছোট ব্যবসায়ী সংস্থা এবং ছোট ছোট কারখানার উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে চলেছে। সুতরাং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির কাঁচামালের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত এবং অন্যান্য ক্ষতিকর দিকগুলিও অনেকটাই বেশি।
কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। একটি দূরবর্তী ছোট গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারলে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে তার ফলে গ্রামের আর্থিক চিত্রটাই বদলে যেতে পারে। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে উপায় নেই। ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশনের মতো ইলেকট্রিকাল ইনক্লুশনও সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। পরমাণু উৎপাদনকে বিকল্প ভাবা হলেও এ দেশে ইউরোনিয়ামের তেমন ভাণ্ডার নেই। কিন্তু আমাদের দেশে জলসম্পদ প্রচুর রয়েছে। দেশের বড় বড় নদীগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে হবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ।এই প্রকল্পগুলিকে ঘিরে সাধারণ মানুষ হয়তো গোড়ায় সংশয়ান্বিত হন, আন্দোলন দানা বাঁধে কারণ বহু মানুষকে উচ্ছেদ হতে হয়। কিন্তু বিকল্প কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে। তবে প্রতিশ্রুতি পালনের ক্ষেত্রে সবাইকে সৎ হতে হবে।
দেশের যে জলসম্পদ রয়েছে সেখান থেকে ১,৪৮,৭০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু আমরা উৎপাদন করতে সম্ভব হয়েছি মাত্র ৩০,৯২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সুতরাং বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুপ্ত সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে এবং একই সঙ্গে অপ্রচলিত শক্তি ক্ষেত্রটিকেও সহায়ক হিসাবে কাজে লাগাতে হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020