দেশে প্রথম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে এই পশ্চিমবঙ্গেরই কলকাতা শহরে। তারিখটা ৭ জানুয়ারি ১৮৯৭। ইন্ডিয়ান ইলেকট্রিক কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে কিলবার্ন অ্যান্ড কোম্পানিকে এ ব্যাপারে লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয়। এক মাস পরে এই কোম্পানির নতুন নামকরণ করা হয় ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন। কলকাতা শহরকে বিদ্যুৎ জোগানোর দায়িত্ব এই কোম্পানি এখনও পালন করে চলেছে। তবে মালিকানার বদল ঘটেছে এবং কোম্পানির মালিকানা বর্তমানে গোয়েঙ্কাদের হাতে।
গত একশো বছরের বেশি সময় ধরে দেশে অসংখ্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। খুব কাছাকাছিই রয়েছে ব্যান্ডেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এই উৎপাদন কেন্দ্রটিতে রয়েছে মোট পাঁচটি ইউনিট এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৪৫০ মেগাওয়াট। প্রথম চারটি ইউনিট গড়ে ওঠে ১৯৬৫-৬৬ সালে। পঞ্চম ইউনিটটি গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। এখানে কয়লার জোগানদার হল কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড। জলের জোগানের জন্য পাশেই রয়েছে গঙ্গা। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে কোলাঘাট, বক্রেশ্বর এবং এ ধরনের আরও অনেকগুলি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বর্তমানে দেশে মোট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৫টি। এই সব কেন্দ্রে রয়েছে ৪২৭টি ইউনিট। আর দেশে গ্যাসভিত্তিক যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উটেছে তার সংখ্যা ৪২ এবং এই সব কেন্দ্রের মোট ইউনিটের সংখ্যা ১৭৪। পশ্চিমবঙ্গের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে মাত্র ১টি। কলকাতার কসবায় দু’টি ইউনিটে উৎপাদিত হয় ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ছাড়া দেশে ১৩টি ডিজেল চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। এই সব কেন্দ্রের ইউনিট সংখ্যা ১৩টি এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৫৯৮.৭৭ মেগাওয়াট। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এখনও কোনও ডিজেল চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
দেশের ৫১ শতাংশ বাণিজ্যিক বিদ্যুতের চাহিদা কয়লা থেকেই মেটানো হয়। কয়লা বা গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হলে আর পূরণ হয় না। দেশের বিজ্ঞানীরা নতুন কয়লাখনি বা গ্যাসের ভাণ্ডার আবিষ্কারে সদা সচেতন। অবশ্য আবিষ্কার সম্ভব হলেও নিঃশেষ হওয়ার সময়সীমা বাড়বে মাত্র। যে কয়লা খনিগুলি উত্তোলনের ফলে খালি হয়ে গিয়েছে সেগুলি তো আর পূরণ হওয়ার নয়। আর আমাদের কয়লাও উঁচু মানের নয়। (কয়লায় ছাইয়ের পরিমাণ বেশি)। সুতরাং কয়লা আমদানি করতে ভালো মতোই বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। তা ছাড়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের আরও একাধিক অসুবিধাজনক দিকও রয়েছে এবং এগুলির মধ্যে অন্যতম পরিবেশ দূষণ।
কারখানাগুলি থেকে ক্ষতিকর গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, চার দিকে ছাই উড়তে থাকে, মানুষ, বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধরা শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়, আশেপাশের জমিতে ফলন কমে যায়। এই সব অসুবিধা দূর করতে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পূর্ণ সুরক্ষা কবচ এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/3/2019