জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণের স্থান এমন ভাবে নির্বাচন করা হয় যাতে নদীটির নিজস্ব জলের উৎসের সঙ্গে সঙ্গে ধেয়ে আসা বৃষ্টির জল এবং সেই সঙ্গে তুষারগলা জল, ঝর্ণার জল প্রভৃতি এই জলাধারটিতে জমতে পারে। সংগৃহীত হতে পারে। জলাধারে সঞ্চিত জলশক্তি হল পোটেনশিয়াল এনার্জি। এই সঞ্চিত জলরাশিকে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে বেরিয়ে আসতে দেওয়া হয়। তৈরি হয় কাইনেটিক এনার্জি। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘোরানো হয় টার্বাইন এবং সেই ঘোরানো টার্বাইনের শক্তি দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। এখানে মেকানিকাল এনার্জি ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো একই ভাবে উৎপাদিত বিদুৎ ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে উপভোক্তাদের কাছে পাঠানো হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই জলের শক্তিকে নানা ভাবে কাজে লাগানোর ঘটনা ঘটে চলেছে। এক সময় এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গম ভাঙানো, গ্রামে জল সরবরাহ প্রভৃতি করা হত। তবে জল থেকে বিদ্যুৎ তৈরির বিষয়টি প্রথম আসে ১৮৭৮ সালে। ইংল্যান্ডের উইলিয়াম জর্জ আর্মস্ট্রং জলবিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি ছোট বৈদ্যুতিক ল্যাম্প জ্বালাতে সক্ষম হন। ১৮৮১ সালে আমেরিকার নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় এবং কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হয়। ভারতে তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পর মতো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও প্রথম গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গে। ১৮৯৮ সালে দার্জিলিং-এ এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। সমগ্র এশিয়া মহাদেশে গড়ে ওটা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে এটি অগ্রগণ্য। ভারত জলসম্পদে সমৃদ্ধ। ফলে দেশে ছোট বড় অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১,৪৮,৭০০ মেগাওয়াট, যদিও ক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
এনএইচপিসি বা জাতীয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম দেশ জুড়ে বহু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র যেমন নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে মিলিতভাবেও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়নের কাজ করছে। এই প্রকল্পগুলি রূপায়িত হলে সংশ্লিষ্ট সব দেশই উপকৃত হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020