দেশে পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের আর একটি ক্ষেত্র হল ভূতাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। আমাদের দেশে উষ্ণ প্রস্রবণের অভাব নেই এবং সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সব প্রস্রবণের সংখ্যা ৩৪০। এই প্রাকৃতিক দানকে কাজে লাগিয়ে কিছু পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ ব্যাপারে কাজ শুরুও হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত উৎপাদনের পরিমাণ নামমাত্র।
২০১৩ সালে ডিসেম্বরে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩৩৯২৯ মেগাওয়াট। যা সমগ্র পৃথিবীর উৎপাদনের নিরিখে চতুর্থ। এ ছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলিতেও তৈরি হচ্ছে ৩৪,৪৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অনেক বড় বড় কারখানা, যেমন ইস্পাত বা সিমেন্ট তৈরির কারখানা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজনে নিজেদের কারখানার চৌহদ্দির মধ্যেই ছোট পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র খোলে। এগুলিকেই বলা হয় ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট। এগুলি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। পুনর্নবীকরণযোগ্য নয় অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির ক্ষমতা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৮৭.৫৫ শতাংশ। অন্য দিকে পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১২.৪৫ শতাংশ। এই পুনর্নবীকরণযোগ্য বলতে বোঝানো হচ্ছে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ শক্তি যেমন সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ বা ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৯১১ বিলিয়ন ইউনিট। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ এবং ক্যাপটিভ প্লান্টগুলিতেও উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্তর্ভুক্ত নয়। জ্বালানি বিদ্যুতের ক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ৫৯ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের ৯ শতাংশ। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ শতাংশ এবং অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদনক্ষমতা ৯ শতাংশ।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে বিশ্বের প্রথম সারিতে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে ভারত সরকার। ২০০৯ সালে ভারতে মোট ব্যবহৃত শক্তি ছিল ৪৮৭.৬ এমটিওই(মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট)।পরিকল্পনা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই ব্যবহার বেড়ে হবে ৭৩৮.০৪৭ এমচিওই,আর এই বিপুল পরিমাণ শক্তির ৩৮ সতাংশ জোগাতে হবে বিদেশ থেকে আমদানি করে। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ব্যবধান কিন্তু ক্রম বধর্মান। একাদশতম পরিকল্পনাকালে ভরাতে মোট ৫৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।কিন্তু তারপরও ঘাটতি রয়ে গিয়েছে, ৮.৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ঘাটতি ৯ সতাংশ মতো।
সূত্র :যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020